আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্ক

আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্ক

আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্ক

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলির সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা করি। আমি বান্দার ওপর যা ফরজ করেছি তা অপেক্ষা আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো বস্তু নেই, যা দ্বারা আমার বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে। আর বান্দা নফল ইবাদতের দ্বারা আমার  নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে থাকে; এক পর্যায়ে আমি আল্লাহ স্বয়ং তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি কিছু চায় আমি তা অবশ্যই দান করি, যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দান করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫০২)

উল্লিখিত হাদিসে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় বান্দাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের নানাদিক ফুটে উঠেছে। বান্দা মহান আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তার নৈকট্য অর্জন করে, তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। বিপরীতে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের শত্রুর শত্রুতা থেকে রক্ষা করেন এবং তাদের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় : পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহ ওলিদের কোনো ভয় নেই, নেই তাদের কোনো চিন্তা। যারা ঈমান এনেছে ও আল্লাহভীতি অবলম্বন করেছে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৩)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের (মুমিনদের) বন্ধু আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ঈমানদাররা; যারা বিনয়ী হয়ে নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর যারা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও বিশ্বাসীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৫৫-৫৬)ঈমান-ইবাদতে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা : আল্লাহর প্রতি মুমিনের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ঈমান ও ইবাদতের মাধ্যমে। মুমিন আল্লাহর প্রতি নিখাদ ঈমানের মাধ্যমে এবং তাঁর নিঃশর্ত আনুগত্যের মাধ্যমে তার ভালোবাসার প্রকাশ ঘটান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় তারা সুদৃঢ়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৫)রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বান্দা সেজদারত অবস্থায় তার প্রতিপালকের সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১১১) #

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘আদায়যোগ্য সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত ফরজ, আর পরিত্যাগযোগ্য আমল হলো আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত হারাম। নিয়তের সততার ওপর প্রতিদান নির্ভর করে।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৩/১৯)

ইবাদতের তাওফিক দানে আল্লাহর ভালোবাসা প্রকাশ : আল্লাহ যে বান্দাকে বেশি ভালোবাসেন তাকে তিনি তার আনুগত্য, ইবাদত ও নৈকট্য লাভের সুযোগ দেন। ভালো কাজের সুযোগ লাভ ও অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে পারা আল্লাহর ভালোবাসা লাভের একটি প্রধান দিক। এটাই নিম্নোক্ত আয়াতগুলোর মর্মকথা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৪)

আর ঈমান, ইবাদত ও আনুগত্যের পথ ধরে বান্দা একসময় আল্লাহর নিকটতম বান্দা তথা ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হয়। হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করতে থাকে এমনকি আমি তাকে ভালোবাসি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)আল্লাহ সব মুমিনকে তাঁর ভালোবাসার দানে ধন্য করুন। আমিন।