বাংলাদেশ-মালদ্বীপ বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছেন।

ছয় দিনের দ্বিপাক্ষিক সফরের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি।’

এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ক্ষমতার ফলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মালদ্বীপে অনেক মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।

শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং বিনিয়োগের পারস্পরিক সুবিধার্থে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ উন্নয়নের বিষয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহ’র সঙ্গে তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

শেখ হাসিনা ২০২১ সালকে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যুগান্তকারী বছর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই বছরের মার্চ মাসে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহ’র উপস্থিতিতে উদযাপন শুরু করতে পারা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয় ‘

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করেন, এসময় দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়।

তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আমরা ঢাকায় আপনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছি।

তিনি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এটিকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা বলে অভিহিত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের পূর্ববর্তী বিভিন্ন সিদ্ধান্তের এ পর্যন্ত হওয়া অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং সন্তোষজনক ফলাফল পেয়েছি। আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনার পর আমরা কিছু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা দেখেছি। আমরা বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ১৩টি সরকারি সামরিক যান মালদ্বীপ সরকারের কাছে হস্তান্তর করার প্রত্যক্ষ করেছি।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য ও কৃষি খাতে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ থেকে স্বাস্থ্য পেশাদার নিয়োগের জন্য মালদ্বীপের দেয়া প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া আমরা মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল কোর্সের সুযোগ তৈরি করব।

বৈঠকে উভয় নেতা সন্তোষের সঙ্গে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশী এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও ঢাকা-মালে রুটে ফ্লাইট চালু করার কথা ভাবছে। আমরা আশা করি সরাসরি ফ্লাইট চলাচলের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও পর্যটন বিনিময় বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন, উভয় দেশ সরাসরি শিপিং লাইন স্থাপনের সম্ভাবনাও পর্যালোচনা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, উভয় দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে তার প্রথম অর্ধশতাব্দীর যাত্রা শেষ করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে নিজেদের একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও উন্নত অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করব। আমাদের দুই দেশের জনগণের সুবিধার জন্য আমাদের অভিন্নতার ক্ষেত্রে মালদ্বীপের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য আমরা আগ্রহী।”

সূত্র : ইউএনবি