পাবনায় সরকারি রাস্তায় প্রভাবশালীর বাঁশের বেড়া! অবরুদ্ধ শতাধিক পরিবার

পাবনায় সরকারি রাস্তায় প্রভাবশালীর বাঁশের বেড়া! অবরুদ্ধ শতাধিক পরিবার

ছবি: প্রতিনিধি

পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার আমিনপুর গ্রামে চলাচলের সরকারি রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নির্বাচিত ইউপি সদস্যর ভাতিজার বিরুদ্ধে। এতে শতাধিক পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারী সম্পত্তি দখল করতেই রাস্তাটি বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ অবরুদ্ধ পরিবারগুলোর। রাস্তা বন্ধের ঘটনাটি পাবনার বেড়া উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়নের আমিনপুর গ্রামে ঘটেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চলাচলের জন্য একটি মাটির রাস্তায় উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে মাটির কাজ চলছে, ঠিক  সেখানেই বাঁশ দিয়ে বেড়া নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে পুরো রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুরো রাস্তাটির দৈর্ঘ্য অর্ধ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৫ ফিট। প্রায় তিন যুগ ধরে ওই সব পরিবার রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করত। গত বুধবার বেড়া উপজেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত টাকায় মাটির কাজ শুরু হলে বৃহস্পতিবার হঠাৎ ওই এলাকার আলহাজ¦ দলবল নিয়ে এসে রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেন। এ সময় বসবাসরত পরিবারগুলো বাধা দিতে গেলে ভয়ভীতি দেখান। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা বেকায়দায় পড়েছেন।

অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্যরা জানান, এখানে বসবাসরত পরিবারের সদস্যরা সবাই শান্তিপ্রিয় ও কর্মজীবী মানুষ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। যে ব্যক্তি (আলহাজ্ব) রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তিনি একজন স্থানীয় প্রভাবশালী ও মাদক ব্যবসায়ী। আমরা ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে ওই রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করছি।

হঠাৎ করে আলহাজ্ব অন্যের হয়ে এসে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। তিনি জাতসাকিনী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কালাম ম্বেবরের ভাতিজা ও খাস আমিনপুর গ্রামের মোস্ত মন্ডলের ছেলে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় থানা পুলিশও অবহিত। কালাম মেম্বরের ইন্ধনে তার ভাতিজা এমন কাজকর্ম করছেন বলেও দাবি তাদের।

তারা আরো জানান, এই রাস্তার মাথায় এক সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ইটভাটা ছিল, সেখান থেকে ট্রাক  যোগে ইট আনা নেয়া করতেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই রাস্তাটি তৈরি করেন। এখন স্থানীয় অসাধু কিছু  লোকজন সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা ও রাস্তা দখলে নিতেই এই কাজ করেছেন বলেও জানান তারা। বেড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শায়লা শারমিন ইতি বলেন, সরকারী রাস্তা জেনেই উপজেলা পরিষদ  থেকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সেখানে কাজ করতে গিয়ে একজন নিজের দাবি করে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিটক স্থানীয় গ্রামবাসীও আবেদন দিয়েছেন, দেখা যাক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার কি করেন। আমি নিজেও জানি এবং ম্যাপও (নকশা) দেখেছি সেখানে সরকারি রাস্তা আছে। কেউ যদি ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে থাকেন বিষয়টি যাচাই বাছাই করলেই পরিষ্কার হওয়া যাবে।

 

আলহাজ্ব মন্ডল বলেন, স্থানীয়ভাবে বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা থানাতেও অভিযোগ দিয়েছি। তবে তিনি বাঁশ দিয়ে বেড়া দেননি দাবি করে বলেন,‘ যার জায়গা  সেন বেড়া দিয়েছে। রবিউলের জায়গা সে বেড়া দিয়েছে বলে রেখে দেন।

কালাম মন্ডল বলেন, আমার সাথে দেখা করেন, ফোনে কোন কথা হবে না। ওই দিক দিয়ে ট্রাক চলাচল করতো, রাস্তা আছে কিনা আমি জানি না। আমার ভাতিজা কি করলো সেটা আমার দেখার নেই, বিষয়টি ভাতিজার ব্যাপার।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সেটা নিয়ে কাজ করছি।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী বলেন, বিষয়টি আমি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শুনেছি, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।