আমির হামজার সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক নিয়ে সমালোচনা, তদন্ত করবে সরকার

আমির হামজার সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক নিয়ে সমালোচনা, তদন্ত করবে সরকার

আমির হামজার সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক নিয়ে সমালোচনা, তদন্ত করবে সরকার

বাংলাদেশের চলতি বছরের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার - স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য সাহিত্য ক্যাটাগরিতে মনোনীত হওয়া আমির হামজার বিষয়ে তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সরকার বলছে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে এবং যেসব বিষয় নিয়ে অনেকে আপত্তি করছে সেগুলো তদন্ত করা হবে।

জাতীয় পুরষ্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহবায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখবেন। তবে মিস্টার হামজার মনোনয়ন বাতিল বা পর্যালোচনা করা হবে কি-না তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন জবাব তিনি দেননি।এর আগে ২০২০ সালে সাহিত্য ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরষ্কার নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর মনোনয়ন বাতিল করেছিলো সরকার।

সাহিত্যিক আনিসুল হক বলছেন মিস্টার হামজাকে সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বা পালাগান কিংবা অন্য কোন অবদান থাকলে যাচাই সাপেক্ষে তার ভিত্তিতে দেয়া যেতো।

"আমি মনে করি পুরষ্কার দেয়ার বর্তমান পদ্ধতিটাই বাতিল করা উচিত। এক-দুই জন আমলা বললো আর একজনকে মনোনয়ন দেয়া হলো-এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রহমান, হাসান আজিজুল হকের মতো সাহিত্যিকরা এ পুরষ্কার পেয়েছেন। সেই মর্যাদা বিবেচনায় নেয়া উচিত,"  বলছিলেন তিনি।মিস্টার হক বলছেন যে আমির হামজার নাম তিনি আগে কখনো শোনেননি। বাংলাদেশের আরও কয়েকজন সুপরিচিত সাহিত্যিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই ধরণের মন্তব্য করেছেন।

চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরষ্কার পাওয়ার তালিকায় তার নাম দেখার পর অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন, কারণ মিস্টার হামজার নাম সাহিত্য অঙ্গনে আগে শোনা যায়নি।২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মারা যাওয়া এ লেখকের দুটো বই আছে - 'বাঘের থাবা' ও 'পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব' তুমি শিরোনামে।

কীভাবে এলো আমির হামজার নাম

মিস্টার হামজা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং পালাগান কিংবা গীতিকবি হিসেবে নিজ এলাকায় তার পরিচিতও আছে।তার ছেলে একজন সরকারি কর্মকর্তা। মূলত তিনিই আবেদন করেছিলেন তার বাবাকে স্বাধীনতা পুরষ্কার দেয়ার জন্য।আর তাতে সাক্ষর করে সুপারিশ করেছিলেন একজন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা।পরে মন্ত্রীসভা বিভাগ কর্তৃক গঠিত জাতীয় পুরষ্কার সংক্রান্ত কমিটি সেটি চূড়ান্ত করে নাম প্রকাশ করেছে।

সে কমিটির আহবায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন কমিটিতে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিব আছেন। সবাই দেখেশুনেই নামগুলো চূড়ান্ত করেছে।"এখন আমি পত্রিকায় দেখেছি। তদন্ত করে আগে দেখি," বলছিলেন তিনি।

কিন্তু এটি বাতিল বা পর্যালোচনার কোন সম্ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এখনই এ বিষয়ে বলতে পারছি না, আগে দেখি বিষয়গুলো"।এর আগে ২০২০ সালেও সাহিত্য ক্যাটাগরিতে যাকে প্রথমে মনোনয়ন দিয়েছিলো তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।পরে সমালোচনার মুখে এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের মনোনয়ন বাতিল করেছিল সরকার।

এবারেও পুরষ্কার ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা দেখা যায়।সরকার সমর্থকদের কেউ কেউ অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা ও তৃণমূল পর্যায়ে পালাগান রচয়িতা হিসেবে মিস্টার হামজাকে স্বাধীনতা পুরষ্কার দেয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।যদিও সরকার সমর্থকদেরই আরেকটি অংশ মিস্টার হামজার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন।

কীভাবে স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য চূড়ান্ত হয় নাম

স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য সরকারের নির্ধারিত ছকে নাম প্রস্তাবের সুযোগ আছে। সেখানে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে তার অবদান জানাতে হয়।সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা সচিব পর্যায়ের কোন কর্মকর্তার সুপারিশ নিয়ে চূড়ান্ত কমিটিতে যায়।

এরপর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় কমিটি সেগুলো যাচাই বাছাই করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য চূড়ান্ত করে থাকে।সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন এ পদ্ধতির পরিবর্তে প্রতিটি ক্যাটাগরিতে একটি শক্তিশালী বিশেষজ্ঞ কমিটি করা উচিত।"সংগীতজ্ঞরা ঠিক করবেন গানের ক্ষেত্রে কে পাবে, সাহিত্যিকরা ঠিক করবেন সাহিত্যে কে পাবে কিংবা প্রকৌশলীরা ঠিক করবেন কোন প্রকৌশলী পেতে পারেন কি-না। পুরষ্কারের জন্য আসা প্রস্তাবগুলো এভাবেই যাচাই বাছাই করা উচিত," বলছিলেন তিনি।

সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরষ্কার পাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু নাম

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রবর্তন করা হয়েছিলো ১৯৭৭ সালে। সে বছর সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পুরষ্কারটি পেয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এর পরের বছর পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ও তারপরের বছর পেয়েছেন আবুল মনসুর আহমেদ।

এরপর থেকে গত বছর পর্যন্ত যারা সাহিত্য ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরষ্কার পেয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন কবি শামসুর রাহমান, জহির রায়হান, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, শওকত ওসমান, শহীদুল্লাহ কায়সার, কবি ফররুখ আহমদ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মহাদেব সাহা, হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নির্মলেন্দু গুন, আবদুল গাফফার চৌধুরী ও সৈয়দ শামসুল হকের মতো সুপরিচিত লেখক-কবি ও সাহিত্যিকরা।

বাংলাদেশে জাতীয় পুরষ্কার কতগুলো

মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ২০১৯ সালের ঘোষণা অনুযায়ী দেশে এখন ছয়টি জাতীয় পুরষ্কার আছে।এগুলো হলো- স্বাধীনতা পুরষ্কার, একুশে পদক, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার ও জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার।পুরষ্কার হিসেবে একটি পদক, পদকের রেপ্লিকা, নগদ টাকা ও সম্মাননাপত্র দেয়া হয়।এর মধ্যে স্বাধীনতা ও একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে এসবের পুরস্কারের বাইরেও জাতীয় পর্যায়ে দেয়া হয় জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা পুরস্কার, জাতীয় শিশু পুরস্কার, জাতীয় সমবায় পুরষ্কার, জাতীয় যুব পুরষ্কার ও রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরষ্কার।যদিও এসব পুরষ্কার জাতীয় পুরষ্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আওতার বাইরে। মূলত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব পুরষ্কার দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকে।

সূত্র : বিবিসি