অস্কার মঞ্চে উইল স্মিথ কেন ক্রিস রককে ঘুষি মারলেন

অস্কার মঞ্চে উইল স্মিথ কেন ক্রিস রককে ঘুষি মারলেন

অস্কার মঞ্চে উইল স্মিথ কেন ক্রিস রককে ঘুষি মারলেন

চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে অভিনেতা ক্রিস রকের মুখমণ্ডলে আঘাত করেছেন আরেক অভিনেতা উইল স্মিথ।উইল স্মিথ এবারে সেরা অভিনেতার অস্কারও জিতেছেন।

অন্য একটি ক্যাটাগরির অস্কার হস্তান্তরের সময় ক্রিস রক মঞ্চে উইল স্মিথের স্ত্রী জেডা পিনকেট স্মিথকে নিয়ে একটি রসিকতা করার পরেই এ কাণ্ড করে বসেন এ হলিউড তারকা।পিনকেট স্মিথের কামানো মাথাকে ইঙ্গিত করে ক্রিস রক বলেছিলেন, ‘জেডা, জিআই জেন : টু-এর জন্য আমার আর তর সইছে না।’

এ রসিকতার পরেই উইল স্মিথ মঞ্চে উঠে যান এবং ক্রিস রককে ঘুষি মেরে বসেন। নিজের আসনে ফিরে আসার সময়ে উইল স্মিথ চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তোমার ...(প্রকাশে অযোগ্য গালি) মুখ থেকে আমার স্ত্রীর নাম উচ্চারণ করা বন্ধ রাখো।’উইল স্মিথ অবশ্য পরে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

প্রথমবারের মতো অস্কার পুরস্কার গ্রহণের সময় দেয়া প্রতিক্রিয়ায় উইল স্মিথ বলেন, ‘আমি অ্যাকাডেমির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই। আমি বাকি সব মনোনীতদের কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই। শিল্প হচ্ছে জীবনের প্রতিচ্ছবি। আমাকে এখন একজন পাগল পিতার মত দেখাচ্ছে, যেমনটি সবাই বলে রিচার্ড উইলিয়ামসকে নিয়ে। কিন্তু ভালবাসা তোমাকে দিয়ে পাগলামি করিয়ে নেবে।’

জেডা পিনকেট স্মিথ আগেই তার একটি অসুখের কথা জানিয়েছেন - অ্যালোপেসিয়া নামে এ রোগের কারণে তার চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়েছে।

ঘটনার আকস্মিকতায় ক্রিস রক বিহ্বল হয়ে পড়েন। পরে অবশ্য পরিস্থিতি হালকা করার জন্য তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এটা ছিল টেলিভিশনের ইতিহাসের সবচাইতে স্মরণীয় রাত।’তারপর তিনি সেরা প্রামাণ্যচিত্রের অস্কারটি হস্তান্তর করেন। এ কারণে ওই সময় মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি।

নেপথ্য মঞ্চের প্রতিক্রিয়া

অস্কার অনুষ্ঠানের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সংবাদিক স্টিভেন ম্যাকিনটশ জানাচ্ছেন, এ ঘটনায় লস অ্যাঞ্জেলসের ডলবি থিয়েটারের নেপথ্য মঞ্চ থেকে অনেক সাংবাদিকই মন্তব্য করেছেন যে তারা বিস্মিত হয়েছেন।অস্কারবিজয়ীদের একটি সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছিলেন ওই সাংবাদিকেরা। কিন্তু তাদের মনোযোগ হঠাৎ করেই ঘুরে যায় পর্দার দিকে যখন মঞ্চে এ ঘটনা ঘটছিল।

প্রথমে মনে হচ্ছিলো এটা সাজানো। কিংবা কোনো রসিকতা।এমনকি ক্রিস রক যখন রসিকতাটি করছিলেন, তখন প্রথমে হেসেও উঠেছিলেন উইল স্মিথ।জেডাকে বিরক্ত দেখাচ্ছিল। কিন্তু এ পর্যায়ে মনে হচ্ছিল এ রসিকতার পুরোটাই পূর্ব পরিকল্পনার অংশ।যখন উইল স্মিথ চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন এবং ক্রিস রককে ঘুষি মেরে বসেন, তখনই সংশয় দেখা দেয়।

অবশ্য, দু’জন ব্যক্তিই চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের ঝানু অভিনেতা। তাদের জানার কথা, একটি ভুয়া আঘাতের দৃশ্য কিভাবে মঞ্চস্থ করতে হয়।কিন্তু সবারই এটা দেখে মনে হয়েছে যে, এটাকে দেখে একেবারেই সাজানো মনে হচ্ছে না।

আর যখন উইল স্মিথ নিজের আসনে ফিরে এসে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার স্ত্রীর নাম তোমার ...(প্রকাশে অযোগ্য গালি) মুখ থেকে বের করা বন্ধ কর’, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়, এটা একেবারেই সাজানো নয়।উইল স্মিথের মত একজন পেশাদারের জানার কথা, ইংরেজি 'এফ' অক্ষর দিয়ে শুরু প্রকাশে অযোগ্য গালি কোথায় দেয়া যাবে আর কোথায় নয়।

যারা বাড়িতে বসে এ ভিডিও দেখেছেন তারা অবশ্য গালিটি শুনতে পাননি। সম্প্রচার নেটওয়ার্ক এবিসি অনতিবিলম্বে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল।বিজয়ীদের কক্ষে নীরবতা নেমে এসেছিল।অ্যাকাডেমির কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের বিহ্বল লাগছিল।ক্রিস রককে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি বিরাট একটি ধাক্কা খেয়েছেন।

কিন্তু যখন তিনি বুঝলেন যে তিনি অস্কার অনুষ্ঠানে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছেন, তখন তিনি পরিস্থিতি হালকা করার একটা চেষ্টা চালান এবং বলেন, ‘এটা ছিল টেলিভিশনের ইতিহাসের সবচাইতে স্মরণীয় রাত।’এটা অনেকটা এর আগের অস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানগুলোর কয়েকটি ভাইরাল ঘটনার মতো একটা - এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালে, যেবার সেরা চলচ্চিত্রের নাম ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল।

উল্লেখ্য, পিনকেট স্মিথ প্রথম তার চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে কথা বলেছিলেন একটি ফেসবুক আলোচনা অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার চুল পড়ে যাচ্ছে। যখন এটা প্রথম শুরু হয় তখন খুব আতঙ্কিত করে ফেলেছিল আমাকে।’

দ্য গার্লস ট্রিপ-খ্যাত তারকা বলেছিলেন, একদিন গোসলের সময় এক মুঠো চুল উঠে আসার পর তার ধারণা হয় যে তার অ্যালোপেসিয়া হয়ে থাকতে পারে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, হায় খোদা, আমি কি টাক হয়ে যাচ্ছি! এটা আমার জীবনের ওই দিনগুলোর একটি যেদিন আমি আতঙ্কে কাঁপছিলাম। এজন্য আমি আমার চুল কেটে ফেলি। তারপর সবসময়ই আমি চুল কেটে রাখি।’

সূত্র : বিবিসি