পাবনায় পেঁয়াজের উৎপাদন খরচই উঠছে না!

পাবনায় পেঁয়াজের উৎপাদন খরচই উঠছে না!

ছবি- নিউজজোন বিডি

পাবনা প্রতিনিধি:দাম না পাওয়ায় চাষীদের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পেঁয়াজ। ১৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচও ওঠছে না কৃষকদের। তাই পেঁয়াজচাষীদের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। দেশে মোট চাহিদার বড় অংশ পূরণ করে থাকে পেঁয়াজের রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাবনা জেলা। বিশেষ করে জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়ায় এবার পেঁয়াজের (হালি) ফলন হয়েছে বাম্পার। ফলনে সন্তুষ্ট হলেও দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা  হাট বাজারসহ আনাচে কানাচে পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ। হাটবাজারগুলো এখন পেঁয়াজে ঠাসা। কিন্তু দাম নেই। লাভ তো দূরের কথা। বীজ, জমির মূল্য, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি মিলে উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। তাই হাসি নেই পেঁয়াজচাষীদের মুখে। চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

পাবনা জেলার বিভিন্ন হাটবাজার এখন পেঁয়াজে সয়লাব। ক্রেতার অভাবে পেঁয়াজ সামনে নিয়ে কৃষকদের হতাশ হয়ে দঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় পেঁয়াজচাষীদের। পাইকারি ব্যাপারিরা দাম বলার সাথে সাথেই বিক্রেতারা কম দামেই বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সুজানগরের দূর্গাপুরের চাঁদ আলী মন্ডল বলেন, ‘এবার আমি ২৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে যে দাম দেখছি তাতে উৎপাদন খরচই নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো না। এমনটি যদি হয়; তবে ভবিষ্যতে পেঁয়াজ আবাদ নিয়ে ভাবতে হবে।’

বনগ্রাম হাটে কথা হয় কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সুজানগরের ভায়না গ্রামের মুহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রামাণিক জানালেন,‘ এ বছর তিনি আবাদ করেছেন সাড়ে ২০ বিঘা। তিনি বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে কীটনাশক খরচ ৩ হাজার টাকা, সার ও চাষ বাবদ ৫ হাজার টাকা। লেবার খরচ ১৫ হাজার টাকা। আর জমি লীজ নিতে হয় ২০ হাজার টাকা দিয়ে। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ৪০ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। এবার বিঘা প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ মন। আর বাজারে ৬শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ করে বিক্রি হচ্ছে। তাতে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি বিঘায়।’

বেড়ার চতুরহাটে পাইকারী ক্রেতা করিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ, কিন্তু চাহিদা কম। চাহিদা কম থাকায় দাম কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এতে কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; তেমনি আমরা পাইকারী ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে আছি।

জেলার বিভিন্ন স্থানের কৃৃষকরা জানান, এখন চলঝে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। কম দামের বিদেশি  পেঁয়াজ বাজারে থাকায় আমাদের দেশি পেঁয়াজের চাহিদা কম। এবার আমদানি কিছুটা কমিয়ে কৃষকদের কাছ  থেকে সংগ্রহ করে যদি হিমাগার বা সংরক্ষণাগারে রাখে তাহলে দেশের মানুষ ও কৃষকরাও ব্যাপক লাভমান হতো। কিন্তু আমরা বার বার এসব দাবি করেও কোনও লাভ হয়নি। পেঁয়াজের সংরক্ষণাগার তৈরি করতে কোনও উদ্যোগই নেয়নি সরকার।

পাবনা কৃষি দফতরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫শ’১৩ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার ৪৫  হেক্টর জমি। কিন্তু চাষীরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫৫ হেক্টর জমিতে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করেছে। বিভিন্ন ধরণের উচ্চ ফলনশীল জাতের বিশেষ করে বারি পেঁয়াজ-১ থেকে বারি-৫ আবাদে অতীতের চেয়ে অনেক বেশি ফলন হয়েছে পেঁয়াজে। জেলার মধ্যে সুজানগর, বেড়া ও সাঁথিয়ায়  আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সব চেয়ে বেশি। এ তিনটি উপজেলায় ৩৫ হাজার ৫শ’৩০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। 

সুজানগরের খয়রান, দূর্গাপুর ও সাঁথিয়ার বনগ্রামের মাঠ ঘুরে সাংবাদিকরা দেখতে পান বাড়ির নারী-পুরুষসহ শিশুরাও তীব্র গরম সহ্য পেঁয়াজ তুলছেন শ্রমিকদের সাথে। কে কৃষক  কে শ্রমিক বোঝার মত নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আমাদের ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৩ হেক্টর জমিতে এবার চাষ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম একটু নিম্নমুখি। তবে পেঁয়াজগুলো যদি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকতো; তা’হলে কৃষকরা ভালো লাভবান হতো।’ পাবনা অঞ্চলে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার খুবই প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।