হাওরে আরও বড় ঢলের শঙ্কা, পাকা ফসল তুলে ফেলার তাগিদ

হাওরে আরও বড় ঢলের শঙ্কা, পাকা ফসল তুলে ফেলার তাগিদ

হাওরে আরও বড় ঢলের শঙ্কা, পাকা ফসল তুলে ফেলার তাগিদ

বাংলাদেশের হাওর এলাকায় বড় ধরনের ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং বার্তা পেয়ে কৃষকদের সব পাকা ফসল দ্রুত তুলে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

অন্যদিকে এক দফায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো মেরামত করে নতুন ঢলের জন্য প্রস্তুত করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন দুই একদিনের মধ্যে ঢলের পানি আসা শুরু হলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসল রক্ষা করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা কঠিন হতে পারে।

মূলত ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং সেটি অব্যাহত থাকলে দুই একদিনের মধ্যেই পানি বাংলাদেশের হাওর এলাকায় আসতে শুরু করবে।আর এই পানির ঢল বড় আকারে হলে দেশের বড় হাওরগুলোও পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এম এম শহিদুল ইসলাম  বলেছেন বাংলাদেশে ৯৫টি হাওর আছে এবং এর মধ্যে ৪৩টি হাওরের বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।"আমরা দ্রুতগতিতে সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পানি দ্রুত চলে আসলে কী হবে বলা কঠিন। তবে আমরা ফিল্ডে থেকে কাজ করছি। চেষ্টা করছি পরিস্থিতির অবনতি যেন না হয়," বলছিলেন মিস্টার ইসলাম।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ নাগাদ সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ বেশ কিছু হাওর এলাকা তলিয়ে গিয়েছিলো বন্যার পানিতে। উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সেদিকের নদনদীর পানি এখনও অনেক বেশি।

এই ঢলে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪হাজার ৩শ একর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশে হাওর এলাকার প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার একর জমিতে এবার ধানের চাষ হয়েছে।এর মধ্যে যেসব এলাকার ধান পেকে গেছে সেগুলো তোলার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

দেশের হাওর এলাকার মধ্যে অন্যতম সুনামগঞ্জের জেলা কৃষি অফিসের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম  বলেছেন যে তারা ইতোমধ্যেই কৃষকদের সব পাকা ফসল তুলে ফেলার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।"সব কৃষককে নতুন ঢলের আশঙ্কার বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফসল কাটাও শুরু হয়েছে। কিন্তু যদি রবিবার থেকেই পানি আসা শুরু হয় তাহলে কিছু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে," বলছিলেন তিনি।

যে কারণে হাওরে ঢল নামতে পারে

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলছেন যে আসাম ও মেঘালয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে এবং সে কারণে হাওর এলাকায় ঢলের পরিস্থিতি হতে পারে।

একই ধরনের পূর্বাভাস আছে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকেও। এতে করে যেসব এলাকায় হাওরের বাঁধ সংস্কার করা হয়নি সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ।এর মধ্যে কিছু এলাকায় মানুষজন নিজ উদ্যোগে বাঁধ ঠিক করার চেষ্টা করছে এমন খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।

বেশ কিছু বাঁধের পানির অবস্থান বিপজ্জনক অবস্থায় আছে এবং কোথায় কোথায় অল্প অল্প করে পানি ভেতরে প্রবেশ করছে বলেও জানা গেছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম অবশ্য জানিয়েছেন যে তারা ভাঙ্গন প্রবণ এলাকাগুলোর বাঁধের সংস্কার কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন।

সাতশ বাঁধের কাজ শেষ হয়নি

জানা গেছে গত তিন মাসে প্রায় একশ বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতশ'রও বেশি বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেটি করা যায়নি।এসব কাজে উঠেছে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগও।

এর আগে চলতি মাসের শুরু থেকেই পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্ত এলাকায় নদনদীর পানি বেড়ে গিয়েছিলো। পরে তা প্রবাহিত হয় ভাটি অঞ্চলের হাওরের দিকে।ফলে বিপুল পরিমাণ নিচু জমি তলিয়ে ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে।এখন নতুন করে আরও বড় আকারে ঢল আসলে সেটি বিদ্যমান বাঁধ দিয়ে কতটা ঠেকানো সম্ভব হবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্র  : বিবিসি