বিশ্বকাপের বছরে আর্জেন্টিনার ফর্ম যে বার্তা দিচ্ছে

বিশ্বকাপের বছরে আর্জেন্টিনার ফর্ম যে বার্তা দিচ্ছে

বিশ্বকাপের বছরে আর্জেন্টিনার ফর্ম যে বার্তা দিচ্ছে

লন্ডনের ওয়েম্বলিতে ফিনিলিসিমায় ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন ও ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়নের মধ্যকার এই ম্যাচটি প্রায় তিন দশক পরে আয়োজিত হলো, যেখানে এর আগের বারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা।

গত কয়েক বছরে আর্জেন্টিনার ধারাবাহিক পার্ফম্যান্সের পর বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগেই এই জয়ে সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার হতেই পারে।২৯ বছর পর এই প্রথম দুই মহাদেশের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল দুটি মুখোমুখি হয়েছিল বুধবার রাতে।

১৯৮৫ সালে উরুগুয়েকে হারিয়ে এই ট্রফি জিতেছিল ফ্রান্স, ১৯৯৩ সালে ডেনমার্ককে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জয় পেয়েছিল, সেবার ট্রফি হাতে তুলেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, এবার লিওনেল মেসি।

লিওনেল মেসি ক্রস থেকে লওতারো মার্টিনেজ প্রথম গোলটি দিয়েছে, দ্বিতীয় গোলটিতে লওতারো মার্টিনেজ ডি মারিয়াকে বল বানিয়ে দিয়েছেন এবং বাড়িয়ে দেয়া সময়ে ব্যবধান বাড়ান পাওলো দিবালা যিনি এই মৌসুমে জুভেন্টাস ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ওদিকে ইতালির ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েলিনির শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল এটি।২০১৯ সালের জুন মাসের পর আর কোনও ম্যাচে হারেনি আর্জেন্টিনা। গত দশকে এমন সফলতা পায়নি দক্ষিণ আমেরিকান দলটি।

১৯৯৩ সালের পর প্রথম কোপা আমেরিকা জয়, কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সহজেই উত্তীর্ণ হওয়া এবং এবারে ইউরো চ্যাম্পিয়নকে হারানো, দারুণ সময় পার করছে লিওনেল মেসির নেতৃত্বে থাকা আর্জেন্টিনা।ওয়েম্বলিতে মেসি ছিলেন উজ্জ্বল, সাথে ডি মারিয়া, লওতারো মার্টিনেজও নজর কেড়েছেন।

মেসি ও ডি মারিয়া দলীয়ভাবে তাদের প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ক্লাব সতীর্থ ইতালির গোলকিপার জিওনলুইজি ডোনারামাকে সহজেই পরাস্ত করেছেন।তবে ইতালি ডোনারামার ওপর কৃতজ্ঞই থাকবে, গোলবারের নিচে তার দৃঢ়তার কারণে স্কোরলাইন ইতালির জন্য তুলনামূলক সম্মানজনক ছিল শেষ পর্যন্ত।

মাত্র দুই মিনিটের মাথায় ডি মারিয়া ডোনারামার মাথার ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে পাঠানোর চেষ্টা করেন, তখন ব্যর্থ হলেও প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে ডি মারিয়া সফলভাবে বল জালে পাঠান।

তার আগেই লিওনেল মেসি প্রায় একাই বল ডি বক্সে টেনে নিয়ে গিয়ে লওতারো মার্টিনেজকে সহজ বল বানিয়ে দিলে, আর্জেন্টিনা প্রথম গোলে এগিয়ে যায়।বিবিসি স্পোর্টের ফিল ডকস লিখেছেন, "আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড বরাবরই বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের নিয়েই গড়া হয়, তবে গত ২ বছরে দেখার মতো বিষয় ছিল আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগের দৃঢ়তা।"

বিশেষত জিওভানি ল সেলসো ও রদ্রিগো ডি পলের প্রশংসা পাওয়ার মতোই খেলেছেন ওয়েম্বলিতে, তারা নিয়মিত মাঠে আক্রমণ তৈরি করেছেন। বল বাড়িয়ে দিয়েছেন সামনের দিকে এবং আর্জেন্টিনার একাদশে শক্তি যোগ করেছেন এই দুজন।

আর্জেন্টিনা ৫৬ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখে এই ম্যাচে, ১৭টি শট নেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা যার মধ্যে ১০টি শটই ছিল লক্ষ্যে।

ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে লিওনেল মেসি তেমন উজ্জ্বল ছিলেন না, মাত্র ১১ গোল দিয়েছেন তিনি, যা তার নামের পাশে বেমানান, গত ১৬ বছরে সবচেয়ে কম।

কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে লিওনেল মেসি যেন ফিরে গেছেন গত বছরের কোপা আমেরিকার ফর্মে, যেই টুর্নামেন্টের দারুণ পারফরমেন্স তাকে সপ্তম ব্যালন ডি অর জিততে সহায়তা করেছিল।

'দারুণ' এই ম্যাচে খেলতে পেরে আনন্দিত লিওনেল মেসি। তিনি বলেন, "এটা দারুণ এক ফাইনাল হয়েছে, প্রচুর আর্জেন্টিনার সমর্থক এসেছেন, আমাদের এই অভিজ্ঞতা খুবই সুন্দর হলো।"

এই বছরের শেষে আছে বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকার পর এই ফিনালিসিমা জয় আর্জেন্টিনার ভক্তদের মধ্যে একটা আশা সঞ্চার করছে।

তবে ম্যাচশেষে বিশ্বকাপ নিয়ে প্রশ্নে লিওনেল মেসি সাবধানি উত্তর দিয়েছেন, "আমি বারবারই বলে আসছি বিশ্বকাপের জন্য আমরা শীর্ষ দল নই এখনো। কিন্তু আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ চেষ্টা করে যাবো। আমরা উন্নতি করছি এবং এটাই আমরা চাই।"

লিওনেল মেসি এটাকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখতে চান, তিনি বলেছেন সেপ্টেম্বরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে সেগুলোতে ভালো খেলাটা জরুরি যাতে এটা বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাস জোগায়।

কিছুদিন আগে মেসির ক্লাব সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপে প্রশ্ন তুলেছিলেন লাতিন আমেরিকান ফুটবলের মান নিয়ে। ডি মারিয়া ম্যাচশেষে বলেছেন, "দক্ষিণ আমেরিকায় আমরা জাতীয় দলগুলোর বিপক্ষেই খেলি, সেই স্কোয়াডের খেলোয়াড়রা ইউরোপের শীর্ষ দলগুলোতে ফুটবল খেলেন। আমরা আজ প্রমাণ করলাম যে আমরা ইউরোপের দলগুলোর মুখোমুখি হতে সক্ষম এটাই গুরুত্বপূর্ণ।"

সূত্র : বিবিসি