শিনজো আবের মৃত্যুতে বিশ্ব নেতাদের শোক

শিনজো আবের মৃত্যুতে বিশ্ব নেতাদের শোক

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে (৬৭)। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে জাপানের কিয়োতোর নিকটবর্তী নারা শহরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। শিনজো আবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। খবর আল জাজিরার।

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ডে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ।

ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এক শোক বার্তায় বলেন, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যুতে আমি এবং আমার পরিবার গভীরভাবে ব্যথিত ও শোকাহত। আমি এই কঠিন সময়ে তার পরিবার এবং জাপানের জনগণের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাই।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন,সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যু জাপানের জন্য খুবই বেদনার। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নেতৃত্ব মনে রাখার মতো। বছরের পর বছর ধরে তার সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়েছে।

শিনজে আবের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক পালনের নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো। তিনি শিনজো আবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, শিনজো আবে ছিলেন একজন অসামান্য রাষ্ট্রনায়ক। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি।

শোক জানিয়ে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ওলাফ শলৎস বলেন, শিনজো আবের ওপর হামলা হতবাক করেছে। আমি গভীরভাবে ব্যথিত। আমি তার পরিবার, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং আমাদের জাপানি বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আমরা জাপানের পাশে আছি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, জাপান একজন মহৎ নেতাকে হারালো। তিনি জাপানিদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।

শিনজো আবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে জাপানের চীনা দূতাবাস। চীনা দূতাবাস বলেছে, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চীন-জাপান সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন। আমরা তার মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশ করছি। 

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি বলেন, ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় আমরা হতবাক।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন বলেছেন, বিশ্ব একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হারালো; তাইওয়ান হারালো একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, শিনজো আবে সিঙ্গাপুরের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন।

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ডে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ। শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যুতে আগামী ৯ জুলাই শনিবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এক দিনের শোক পালন করা হবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এ উপলক্ষে শনিবার বাংলাদেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় শনিবার বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এদিকে শিনজো আবে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। এক শোকবার্তায় স্পিকার তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

উল্লেখ্য, শিনজো আবে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ২০০৬ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৫২ বছর। যুদ্ধ পরবর্তীকালে সবচেয়ে কম বয়সে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। 

তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন।

শিনজো আবেকে তরুণ ও পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখা হত। তবে তিনি রাজনীতিতে নিয়ে এসেছেন তৃতীয় প্রজন্মের কিছু রাজনীতিবিদকে। যারা এসেছে উচ্চপদস্থ এবং রক্ষণশীল পরিবার থেকে। 

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবের প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদ ছিল বাজে। ওই সময় বিভিন্ন স্ক্যান্ডাল এবং বিরোধে জর্জরিত ছিল তার প্রধানমন্ত্রিত্ব। তার প্রথম মেয়াদের অবসান হয়েছিল মাত্র এক বছরের মধ্যে। ওই সময় পদত্যাগ করেন তিনি। 

প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল তিনি রাজনৈতিক কারণে পদত্যাগ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে শিনজো আবে জানান তিনি আলসারেটিভ কোলিটিস নামে রোগে ভুগছিলেন। 

জাপানের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আবে ফের ক্ষমতায় আসেন ২০১২ সালে। এর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালের পর জাপানের ইতিহাসে সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রী ফের ক্ষমতায় আসেন। এরপর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে ফের ক্ষমতায় আসেন। এতে করে প্রধানমন্ত্রী হন আবে। তবে ২০২০ সালে তিনি ফের পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে জানান তার পুরনো রোগ আলসারেটিভ কোলিটিস জটিল আকার ধারণ করেছে।

রাজনৈতিক প্রচারণা চালানোর সময় শুক্রবার সকালে তিনি আততায়ীর হাতে গুলিতে নিহত হন।