কারাগারে প্রবেশে বিধিনিষেধ

কারাগারে প্রবেশে বিধিনিষেধ

ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্তে দুদক কর্মকর্তাদের কারাগারে প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন থেকে কারাগারে ঢুকতে হলে দুদক কর্মকর্তাদের অন্তত চার ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর কারা অধিদপ্তরের অনুমতি মিললেই শুধু তারা কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে কারাগার ও কারা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কাজ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন দুদকের তদন্ত বা অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, কারও পক্ষে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করার সুযোগ নেই। কারাগার যেহেতু কেপিআইভুক্ত এলাকা, তাই তাদের এই সিদ্ধান্তে দুদকের ক্ষমতা খর্ব হয়নি। ঢাকঢোল পিটিয়ে দুদক কর্মকর্তারা কারাগারে গেলে দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত পাবেন কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দরকার হলে দুদকের আইন শাখার সঙ্গে পরামর্শ করে বিধিনিষেধের বিষয় নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। রোববার সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে দুদক কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয় সেখানে প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, ১২ জুলাই কারা অধিদপ্তরের এক চিঠির বরাতে বিধিনিষেধের কথা জানাজানি হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কারাগার একটি স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান। যা কারাবিধি ও সরকার কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য বিধিবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। কারাবিধি মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তির কারাগারে প্রবেশের কোনো আইনি সুযোগ নেই। কারাগারগুলোতে অনেক সময় কোনো পূর্বানুমোদন বা সমন্বয় ছাড়াই তদন্তের উদ্দেশ্যে দুদকের বিভিন্ন টিম কারাগারে যায় এবং ভেতরে প্রবেশ করে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও দুদক সচিবের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা হয়।

আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এখন থেকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বা অন্য যে কোনো টিম কারাগারে কোনো তদন্তের জন্য এলে অন্তত চার ধরনের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। এগুলো হচ্ছে-যে জেলার কারাগারে যাবেন সেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতিপত্র, সংশ্লিষ্ট কারাগারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কপি, সংশ্লিষ্ট টিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়াসংক্রান্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ উল্লিখিত বিষয়াবলী নিশ্চিত করে কারা অধিদপ্তরকে অবগত করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে কারাগারের দুর্নীতি উদ্ঘাটনে দুদক কর্মকর্তাদের কাজ কঠিন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে এতসব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে গেলে তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের আগেই তা সরিয়ে ফেলাও অসম্ভব নয়। তাই এ সিদ্ধান্ত না বদলালে দুদক কর্মকর্তারা কারাগারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

দুদকের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি : দুদক সচিব ব্রিফিংয়ে বলেন, দুদকের নাম ভাঙিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা অবৈধভাবে অর্থ আদায় কিংবা অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কাজে লিপ্ত হয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন মোতাবেক সংস্থার কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগতভাবে কারও সঙ্গে যোগাযোগের এখতিয়ার নেই। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে হলে লিখিতভাবে জানাতে হয়। অভিযুক্তদের দুদক অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক্ষেত্রেও প্রতারক চক্রের সদস্যরা কর্মকর্তাদের সই-সিল জাল করে নোটিশ বা চিঠি তৈরি করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের হীনকর্মে লিপ্ত হয়। দুদকের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা চক্রের সদস্যদের ধরতে তৎপর রয়েছেন। এছাড়াও সংস্থাটির জেলা, বিভাগীয় ও প্রধান কার্যালয়ের সদস্যরাও চক্রের সদস্যদের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন এবং তাদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।