ভারতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিরাট!

ভারতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিরাট!

বিরাট কোহলি

ক্রিকেট বিশ্বে ভারত যে টুর্নামেন্টেই খেলুক না কেন, নামকরা সব ব্যাটসম্যান এবং বৈচিত্র্যময় বোলিং লাইনআপের কারণে ফেভারিট হিসেবেই নামে।

টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের তালিকায় ভারতের নাম থাকে বেশিরভাগ সময়ই। আর এশিয়া কাপ হলে তো কথাই নেই। এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত, শ্রীলঙ্কা জিতেছে পাঁচবার ও পাকিস্তান দুইবার।

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবিন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্র আশ্বিন- বেশ শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞ একটা দল নিয়েই এশিয়া কাপ খেলবে ভারত।

ধারণা করা হচ্ছে, এটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ভারতের শক্তিমত্তার একটা শোডাউন হতে যাচ্ছে।

এশিয়া কাপে এখনো পর্যন্ত যেসব ম্যাচের শিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচ।

এই ম্যাচ দিয়েই দুই দল শুরু করবে নিজেদের এশিয়া কাপ ক্যাম্পেইন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলছেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার ম্যাচে তিনি ভারতকেই এগিয়ে রাখবেন।

এর কারণ ভারতের ব্যাটিং ও বোলিংয় বিভাগের বৈচিত্র্য এবং অভিজ্ঞতা।

দলের শক্তির দিক থেকে ভারতের এই স্কোয়াড নিয়ে প্রশ্ন খুব কমই উঠবে, কিন্তু প্রশ্ন থাকবে সমন্বয় নিয়ে। কারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সঠিক সময়ে সঠিক শক্তির প্রদর্শনটাই জরুরি।

শক্তির দিক সবসময়ই ব্যাটিং
ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের সামনে এখন বেশ কয়েকটি প্রশ্ন আছে।

ভারতের ব্যাটিংয়ে বিশেষত টপ অর্ডারে কে কোথায় নামবেন?

এই প্রশ্নের উত্তর যদি টিম ম্যানেজমেন্ট সঠিক উপায়ে দিতে পারে, তবে ভারতের এই শক্তিমত্তার যথাযথ প্রয়োগ দেখা যাবে এশিয়া কাপে।

প্রথমত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ২০ ওভারের খেলা। এখানে সেট হওয়ার জন্য খুব বেশি সময় নেয়ার সুযোগ নেই।

কিন্তু প্রথম তিনজন ব্যাটসম্যান, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি- তিনজনই সেট হতে সময় নেন।

রোহিত ও বিরাট সেট হয়ে গেলে পরে বলের সাথে রানের গ্যাপ বাড়িয়ে নেন, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দু’জনই ফর্ম হারিয়ে নিজেদের খুঁজছেন।

তিন বছরেরও বেশি সময়, এক হাজার দিনেরও বেশি সময় বিরাট কোহলি কোনো সেঞ্চুরি পাননি।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিং নিয়ে বেশ সমস্যায় ভুগছেন বিরাট। এটা মানসিক স্বাস্থ্যেও চাপ দিচ্ছে বলে স্বীকারও করেছেন তিনি।

ক্রিকেট অনুসারীদের প্রশ্ন, কী হয়েছে বিরাটের?

বিরাটের মতো আলোচনা না হলেও, গত দশকের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মাও ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো সময় কাটাচ্ছেন না।

লোকেশ রাহুল- যিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেললেও ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের পর আর খেলেননি।

এই সব প্রশ্নের উত্তরে উঠে আসছে তরুণ ক্রিকেটারদের নাম, যারা তুলনামূলক ভালো পারফর্ম করেও ব্যাটিং অর্ডারের ওপরের দিকে জায়গা পাবেন না।

সূর্যকুমার যাদব, এসকেওয়াই বা স্কাই নামে পরিচিত এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান সাম্প্রতিক সময়ের শীর্ষ টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের একজন।

তিনি এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাটসম্যানদের র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে আছেন।

ক্রিকেট বিশ্লেষক মাজহার আরশাদ নিজের ভাবনায় ভারতের একাদশ সাজানোর সময় সূর্যকে তিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি এখানে খেলার যোগ্য, এক্ষেত্রে লোকেশ রাহুলকে বেঞ্চে রাখার কথা বলেছেন তিনি।

কিন্তু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৪২ স্ট্রাইক রেটে খেলা রাহুলকে বসানো ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য কঠিন হবে।

একইসাথে যদি রোহিত, রাহুল ও বিরাট সেরা তিনেই খেলেন, সেক্ষেত্রে সূর্য, ঋষভ পান্ত, হার্দিক পান্ডিয়া, দিনেশ কার্তিক নিজেদের মারকুটে ব্যাটিং স্কিল দেখানোর মতো সময় ও সুযোগ পাবেন বলে মনে হয় না।

এটাই ভারতের এই দলের জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্নের জায়গা।

তবে এসব প্রশ্ন বিরাট বা রোহিত এক নিমিষেই একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে উড়িয়ে দিতে পারেন, যেটা তারা সাম্প্রতিক সময়ে পারছেন না।

হার্দিক পান্ডিয়া সময়ের সেরা লিমিটেড ওভার অলরাউন্ডারদের একজন। যিনি ব্যাট ও বল হাতে পারফর্ম করে এবং দলকে নেতৃত্ব দিয়ে গুজরাট টাইটান্সকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।

শেষ ১০ ওভারে তিনি দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারেন, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৪৪। একইসাথে তিনি উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রেও পারদর্শী।

২৮ গড়ে ৫০টি উইকেট নিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

শেষ দিকে যেকোনো খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে পান্ডিয়া-জাদেজা জুটি।

ভারতের আরো একটি শক্তির জায়গা হলো, এরা তুখোর ফিল্ডার।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি নিশ্চিত চার ঠেকিয়ে দেয়া বা কঠিন একটা ক্যাচ নেয়া খেলায় বড় পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে।

আফসোস বুমরাহ'র ইনজুরি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেট হবে ধীরগতির এবং বল নিচু হয়ে আসবে, এই উইকেটের জন্য ভুবনেশ্বর কুমার ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারেন।

তার সাথে আর একজন পেস বোলার নিয়ে নামবে ভারত, এমনটা মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও পরিসংখ্যানবিদ মাজহার আরশাদ।

তিনি তার বিশ্লেষণে বলেছেন, এই ধরনের উইকেটে বল মাটি কামড়ে আসে, এখানে স্পিন বোলারদের বাড়তি সুবিধা থাকে।

তাই ভারতের স্কোয়াডে বিভিন্ন ধরনের এবং বিশ্বমানের স্পিনাররা আছেন- য়ুজবেন্দ্র চাহাল, রবিচন্দ্র আশ্বিন, রবিন্দ্র জাদেজা ও তরুণ স্পিনার রবি বিষ্ণয়।

মাজহার আরশাদের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, ভারতের প্রথম ও এশিয়া কাপের দাবিদার আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী দল পাকিস্তানের শাদাব খান ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যানেরই স্পিনের বিপক্ষে ১৩০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট নেই।

এই সুবিধাটা নেয়ার চেষ্টা করবে ভারত। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ২০ ওভারের মধ্যে কমপক্ষে ১০-১২ ওভার স্পিনার দিয়েই করাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের বোলিং লাইন আপ সবসময়ই ভিন্নতার স্বাদ দিয়েছে।

তবে ভারতের এই বোলিং লাইন আপ পরিপূর্ণ হতো যদি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার জসপ্রিত বুমরাহ ফিট থাকতেন।

বুমরাহ'র ইনজুরির কারণেই ভারতের পেস বোলিং লাইন আপ, তুলনামূলক দুর্বল মনে হচ্ছে।

যদিও কাগজ কলমের হিসাবের সাথে মাঠের খেলার তফাৎ অনেক সময়ই প্রকট হয়ে ওঠে, ভারত গত এক বছরে কোনো দ্বিপক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারেনি।

এটা এই দলটাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে এটুকু নিশ্চিত।

আবুধাবিতে তিনবার এশিয়া কাপ আয়োজিত হয়েছে, তিনবারই ভারত কাপ নিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি