ইসলামে মুনাফা বণ্টনের পদ্ধতি

ইসলামে মুনাফা বণ্টনের পদ্ধতি

প্রতিকী ছবি

আমরা যখন যৌথ ব্যবসা করি; তাতে লাভ-লোকসান থাকে। আর যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হচ্ছে লভ্যাংশকে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা। লাভসংক্রান্ত বিষয়ে কার কতটুকু প্রাপ্য এবং কী শর্তে তা ভাগ হবে, তা স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনায় জটিলতা দেখা দেবে। এ জন্য কে কী পরিমাণ লভ্যাংশ নেবে তা আগে থেকে প্রত্যেকের জানা থাকা শর্ত।

আর এ লভ্যাংশ বণ্টনের ইসলামী কিছু নীতিমালা আছে। কারো প্রতি যেন বিন্দুমাত্র জুলুম না হয়; এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যদি যৌথ ব্যবসার মধ্যে একজন অন্যের সঙ্গে ন্যূনতম খিয়ানত করে তাহলে সেখানে আর বরকত থাকে না। আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বলেন, আমি দুই অংশীদারের মধ্যে তৃতীয় অংশীদার, যতক্ষণ তারা একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাঘাতকতা না করে। যখন এক অংশীদার অন্যের সঙ্গে খিয়ানত করে তখন আমি তাদের থেকে সরে যাই। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৮৩)

নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারণ না করা

যৌথ ব্যবসার মধ্যে মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে কেউ নির্ধারিত অঙ্ক শর্ত করতে পারবে না। অর্থাৎ দুজনের কোনো একজন বলে নিল যে আমাকে প্রতি মাসে এত হাজার (২০০০) টাকা দিতে হবে বা এ জাতীয় কোনো শর্ত করল। তাহলে সে ক্ষেত্রে এই চুক্তি বৈধ নয়; বরং এ ক্ষেত্রে জায়েজ পদ্ধতি হলো এভাবে চুক্তি করা যে একজন অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ নেবে, অন্যজন বাকি অর্ধেক বা দুই-তৃতীয়াংশ নেবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগিরি : ২/৩০২)

পুঁজি অনুযায়ী মুনাফা বণ্টন

যৌথ ব্যবসার ক্ষেত্রে যদি এ ধরনের শর্ত করা হয় যে যার যত পুঁজি আছে সে হারে তাদের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টন করা হবে। তাহলে তা জায়েজ আছে। নিজ নিজ মূলধন অনুপাতে তাদের যৌথ সম্পদের  মুনাফা বণ্টন করা হবে। চাই এ ক্ষেত্রে সবার অংশ সমান সমান হোক বা কম-বেশি হোক। (বাদায়েউস সানায়ে : ৬/৬২)

যে শ্রম দেবে তাকে বেশি লভ্যাংশ দেওয়া

যৌথ কারবারের ক্ষেত্রে যদি এমন হয়ে থাকে যে একজন ব্যবসায় সময় দেয়, অন্যজন দেয় না; তাহলে তাকে পুঁজি অপেক্ষা বেশি মুনাফা দেওয়া জায়েজ আছে। যেমন—খালেদ ও রাশেদ উভয়ে ১০ হাজার টাকা করে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু শ্রম শুধু খালেদ দিয়ে থাকে। তাহলে এ ক্ষেত্রে খালের দুই-তৃতীয়াংশ, আর রাশেদ এক-তৃতীয়াংশ এই শর্তে লভ্যাংশ বণ্টন করা জায়েজ আছে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৬/৬৩)

শ্রমদাতাকে কম লভ্যাংশ দেওয়া

যৌথ ব্যবসার ক্ষেত্রে যদি একজন শর্ত করে সে কোনো শ্রম দেবে না। আর পাশাপাশি সে এভাবে শর্ত করে যে শ্রম না দেওয়া সত্ত্বেও সে তার সহকর্মী থেকে অতিরিক্ত মুনাফা নেবে। তাহলে তা বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরামের মতে নাজায়েজ। অর্থাৎ খালেদ আর রাশেদ দুজনই ১০০০ টাকা করে ইনভেস্ট করেছে। কিন্তু রাশেদ সেখানে কোনো শ্রম দেবে না। তবে সে পুঁজির হার অপেক্ষা বেশি লভ্যাংশ নেবে। অর্থাৎ রাশেদ দুই-তৃতীয়াংশ নেবে আর খালেদ এক-তৃতীয়াংশ নেবে। তাহলে এ ধরনের চুক্তি বৈধ নয়। তবে যদি উভয়ে শ্রম দেয় সে ক্ষেত্রে এভাবে তারতম্য করে উভয়ের সম্মতিক্রমে মুনাফা বণ্টন করা জায়েজ আছে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৬/৬৩)

শ্রম না দেওয়া ব্যক্তিকে কম লভ্যাংশ দেওয়া

যৌথ ব্যবসার ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি শ্রম দেবে না, তার জন্য মূলধনের হাড়ের চেয়ে কম মুনাফা নির্ধারণ করা জায়েজ আছে। এ ক্ষেত্রে এমন হবে, যে ব্যক্তি শ্রম দিচ্ছে সে সেই শ্রমের বিনিময়ে অতিরিক্ত মুনাফা গ্রহণ করছে। আর অন্যজন যেহেতু কোনো শ্রম দিচ্ছে না, তাই সে একটু কম মুনাফা নিচ্ছে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৬/৬৩)

উভয়ে শ্রম দেওয়া সত্ত্বেও মুনাফা তারতম্য

যৌথ ব্যবসায় উভয়ে কাজ করার শর্ত থাকা সত্ত্বেও মুনাফার হার মূলধন থেকে যদি ভিন্ন হয়, তাহলে তা হানাফি মাজহাব অনুযায়ী জায়েজ। কারণ হাদিসে এসেছে, মূলধন অনুপাতে লোকসান বণ্টন করা হবে। আর মুনাফা বণ্টন করা হবে তাদের পরস্পর নির্ধারিত হার অনুপাতে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৫/৪)

তবে অন্য ইমামদের এ ক্ষেত্রে দ্বিমত আছে। তাঁরা যৌথ চুক্তি শুদ্ধ হওয়ার জন্য মূলধন অনুপাতে মুনাফা বণ্টন শর্ত।