সিত্রাং আঘাত হানার দুদিন গেলেও অনেক জায়গায় ফেরেনি বিদ্যুৎ

সিত্রাং আঘাত হানার দুদিন গেলেও অনেক জায়গায় ফেরেনি বিদ্যুৎ

সিত্রাং আঘাত হানার দুদিন গেলেও অনেক জায়গায় ফেরেনি বিদ্যুৎ

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পরদিন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। বুধবারের মধ্যে সব বিচ্ছিন্ন সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

বুধবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের আওতায় থাকা ৯৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ঘূর্ণিঝড়ের রাতে, যার মধ্যে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৮০ লাখ গ্রাহকের সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।তবে অনেক জায়গায় এখনো ফেরেনি বিদ্যুৎ সংযোগ।

বিদ্যুতের কী অবস্থা ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায়?

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ সংযোগের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা।কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আওতায় থাকা ৯৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ঘূর্ণিঝড়ের রাতে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জনসংখ্যা ১০ লাখ। চরফ্যাশনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বিবিসিকে বলেছেন, সোমবার রাতে যখন সিত্রাং আঘাত হানে উপজেলার পুরো জনগোষ্ঠীই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল।বিদ্যুতের অভাবে চরফ্যাশনের চর নিজাম, চর পাতিল এবং ঢালচর নামের তিনটি চরের বরফকল, মাছের গদি অর্থাৎ যেখানে মাছ পাইকারি বিক্রি হয়, এসব বন্ধ ছিল মঙ্গলবার পর্যন্ত।তবে এখন সেখানকার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে।

বিদ্যুতের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আরেকটি এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়ন।চরকাঁকড়া ইউনিয়নটি মূলত প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দার একটি গ্রাম।সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাজেরা আক্তার বলেছেন, এলাকার ৪০ শতাংশ এলাকায় এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।

চরকাঁকড়ায় মূলত সড়কের পাশে থাকা গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের পোল হেলে পড়েছে, কোথাওবা উপড়ে পড়েছে। ফলে তার ছিঁড়ে গেছে।কিন্তু এরইমধ্যে ইউনিয়নের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে।তিনি বলছিলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সকাল থেকে গ্রামের বহু মানুষ মোবাইল চার্জ দিতে এসে জমা হয়েছেন।

এদিকে, পটুয়াখালীর জেলার ৮টি উপজেলার ৬টিতেই ঘূর্ণিঝড়ের রাত থেকে গতকাল সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না। বুধবার সকাল থেকে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হতে শুরু করেছে।

কিন্তু পটুয়াখালীর সাংবাদিক সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, এখনো দুইটি উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন আছেন।এর মধ্যে উপকূলীয় ভোলা জেলার সীমানায় অবস্থিত পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা।সেখানকার অন্তত চারটি গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ ফেরেনি বলছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোমেনা সুলতানা।

কর্মকর্তারা কী বলছেন?

কর্মকর্তারা বলছেন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে, গাছ পড়ে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগের তার ছিঁড়ে দেশের বহু শহর, পৌরসভা এবং গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।অনেক জায়গায় এখনো ফেরেনি বিদ্যুৎ সংযোগ।

এর মধ্যে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দেশের প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখের মতো গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক মঙ্গলবার পর্যন্ত বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিলেন।ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়ে মি. হামিদ বলেছেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পিডিবিসহ সারাদেশে সবমিলিয়ে প্রায় দেড়-দুই হাজার পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছেন, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার আশংকায় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। এবং আজকের (বুধবার) মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে।বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার দিনভর কাজ করে বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত পিডিবির আওতায় থাকা সাত লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৭২ লাখ এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে ৬০ হাজার সংযোগ দেয়া হয়েছে।ঘূর্ণিঝড়ে ডিপিডিসি এবং ডেসকোর কোন গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন ছিলেন না।পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী বিবিসিকে বলেছেন, তাদের আওতায় থাকা ৯৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ঘূর্ণিঝড়ের রাতে।

এর মধ্যে বুধবার সকাল পর্যন্ত মোট ৮০ লাখ গ্রাহকের সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। বাকি ১৪ লাখ গ্রাহকের সংযোগও দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেয়া হচ্ছে।বিভিন্ন জায়গায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আটশোর বেশি পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগের ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১ হাজার ৭১৪টি মিটার নষ্ট হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি