শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে তিন দিনে ৩৭ শিশুর মৃত্যু

শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে তিন দিনে ৩৭ শিশুর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

শীত মৌসুম আসতেই শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে ময়মনসিংহে। বেড়েছে মৃত্যুর হারও। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তিন দিনে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে ৩৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ১১০ শয্যার (বেড) বিপরীতে ভর্তি ছিল ৬১৩টি শিশু।

অনেক শিশুকে মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

অবশ্য চিকিৎসকরা বলছেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিশু রোগীর তুলনায় এ মৃত্যুহার এখনো অস্বাভাবিক নয়। তবে চিকিৎসকরা শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। বিশেষ করে নবজাতকদের ব্যাপারে বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

নবজাতকদেরই মৃত্যুর হার বেশি। চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, বাড়িতে বা ক্লিনিকে যেসব নবজাতক জন্ম নিচ্ছে, তাদের অনেকেই সঠিক পরিচর্যা না পাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল হাসপাতালের পুরনো ভবনের নবজাতক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ার্ডের ভেতরে শিশুদের চিকিৎসা চলছে। বাইরে অভিভাবকদের ভিড়। আমিন মিয়া নামে হালুয়াঘাটের একজন ব্যবসায়ী বলেন, তাঁর শিশুটি বাড়িতে জন্ম নেয়। এরপরই শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তিনি গত শনিবার শিশুটিকে নিয়ে এখানে এসেছেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, নবজাতক ওয়ার্ডে খুবই গুরুতর শিশুদের ভর্তি করা হয়। এদের প্রায় সবার অবস্থা সংকটাপন্ন থাকে। এখানে প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচটি শিশুর মৃত্যু হয়। তবে মৌসুমের এই সময়ে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নবজাতক ওয়ার্ডে ৫০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু গতকাল সেখানে রোগীর সংখ্যা ছিল ২০৪। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত) আটটি শিশু নবজাতক ওয়ার্ডে মারা গেছে। শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৬০টি। কিন্তু গতকাল ৪০৯ রোগী ভর্তি ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় শিশু ওয়ার্ডে চার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশু ফাহিমের মা জানান, তাঁদের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জে। শিশুটির খিচুনি ছিল। পরে এখানে নিয়ে আসেন। শিশুটি কিছুটা সুস্থ আছে আগের চেয়ে।

মাদারীপুরে শয্যার বিপরীতে ৩ গুণ রোগী : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরে আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ায় ১৫ দিন ধরে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ১৫টি। কিন্তু গতকাল ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ৪৪টি শিশু সেখানে ভর্তি ছিল। শিশু ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় অনেক শিশু ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়ছে। একটি শয্যায় দুটি করে শিশু রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে গত এক সপ্তায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে ১১০ জন রোগী। এদের বেশির ভাগ শিশু। হাসপাতাল সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।

হাসপাতালে সদর উপজেলার বড়াইলবাড়ি এলাকার আয়েশা আক্তার জানান, তাঁর ১০ মাসের মেয়ে রোজা মনির গত বুধবার থেকে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। শিশু ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় আরেকটি শিশুর সঙ্গে একই শয্যায় চিকিৎসা চলছে তার। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাকে বাসায় রেখে স্থানীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছিলাম। শারীরিক অবস্থা উন্নতি না হওয়ায় সদরে নিয়ে এসেছি। ’

মাদারীপুর জেলা সিভিল সার্জন মুনীর আহমদ খান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসজনিত কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেশি দেখা দিয়েছে। শীত বাড়ায় শিশুদের শীতবস্ত্র পরতে হবে। সঙ্গে গরম গরম খাবার খাওয়াতে ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে।

সূত্র: কালেরকণ্ঠ