হাসপাতালে গাড়ি বন্ধক রেখে নবজাতকের লাশ নিয়ে বের হলেন বাবা

হাসপাতালে গাড়ি বন্ধক রেখে নবজাতকের লাশ নিয়ে বের হলেন বাবা

ছবি: সংগৃহীত

লেবাননের বাসিন্দা হোসেইন আল-বারিনির (৪৩) একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে হাসপাতাল ছাড়ছেন তিনি। গাড়ি থাকা সত্ত্বেও শিশুপুত্রের লাশ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি! কেন?

কারণ হাসাপাতাল থেকে বলেছে, বিল শোধ না করলে ছেলের লাশ নিতে পারবেন না আল-বারিনি। কিন্তু তার পক্ষে বিল শোধ করা সম্ভব ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালে গাড়ি বন্ধক রেখে ছেলের লাশ নিয়ে বের হয়েছেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নীল তোয়ালেতে জড়িয়ে শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন আল-বারিনি। উত্তর লেবাননের আক্কারের ফানাইদেক শহরে তার বাড়ি। সেখানকার খালাফ আল-হাবতুর প্রাইভেট হাসপাতালে গাড়ি বন্ধক রেখে সন্তানকে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন তিনি।

আনাদোলু অ্যাজেন্সিকে আল-বারিনি জানান, ২৫ দিনের শিশুপুত্রের নিথর দেহ হাসপাতাল থেকে নিতে তাকে দুই হাজার চার শ’ ডলার (মার্কিন) শোধ করতে হতো, যা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই হাসপাতালে তাকে গাড়ি বন্ধক রাখতে হয়েছে।

তিনি জানান, খালাফ আল-হাবতুর হাসপাতাল থেকে তাকে ফোন দিয়ে বলা হয়, জন্মের পর থেকেই আইসিইউ’তে থাকা তার ২৫ দিনের শিশুপুত্র মারা গেছে।

আল-বারিনি বলেন, ‘আমি সাথে সাথে হাসপাতালে ছুটে যাই মৃত সন্তানকে নিয়ে আসতে। তখন এক কর্মচারী আমাকে দুই হাজার চার শ’ ডলারের (মার্কিন) বিল হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময় আমার হাতে কেবল চার শ’ ডলার ছিল। আমি তাকে জানালে তিনি কোনো জামিনদার ছাড়া আমাকে লাশ দিতে রাজি হন না।’

‘পরে ওই কর্মচারী আমাকে গাড়ি দেখিয়ে বলেন বন্ধক রাখতে। প্রথম আমি রাজি না হলেও পরে ভেবে সিদ্ধান্ত নেই। আমি তাকে গাড়ির চাবি দিলে, তিনি হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ওই গাড়ির দাম জিজ্ঞেস করলে তিনি দুই হাজার ডলার বা এর কাছাকাছি হবে বলে জানান।’

তিনি কর্মচারীকে বলেন, ‘বিল পরিশোধ করার পর গাড়ির চাবি আমাকে ফেরত দিতে হবে এই শর্তে তার কাছে বন্ধক রাখব।’

“এরপর আমি আমার হাতে সন্তানের লাশ তুলে দেয়া হলে বলি, আমি কিভাবে বাড়ি ফিরব? তার জবাব শুনে, আমি হতভম্ব হয়ে যাই। বলেন, ‘সেটা তোমার ব্যাপার!’ এরপর আমি হেঁটে প্রধান সড়কে যাই। তারপর একটা ট্যাক্সিতে উঠি।”

এ ব্যাপারে হাসপাতালের মহাপরিচালক রাওয়া আল-আহদাব বলেন, ‘আমি জানি লেবাননের মানুষের আর্থিক অবস্থা এখন কেমন, বিশেষ করে আক্কার প্রদেশে। বড় ধরণের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ঘটনা শোনার পর ওই ব্যক্তিকে (আল-বারিনি) আমি ডেকে আনি। তাকে সমবেদনা জানাই। এবং তার গাড়ির চাবি ফিরিয়ে দেই। এবং ওই কর্মচারীরর আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করি।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর