ইসলামী ‍বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় নিশ্চুপ শিক্ষক সংগঠনগুলো!

ইসলামী  ‍বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় নিশ্চুপ শিক্ষক সংগঠনগুলো!

ইসলামী ‍বিশ্ববিদ্যাল : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় নিশ্চুপ শিক্ষক সংগঠনগুলো!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবাসিক হলে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চললেও বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকসংগঠনগুলোকে কোন প্রকার প্রকাশ্য প্রতিবাদ বা বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। নির্যাতিতা ছাত্রীর মুখে নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা, লিখিত অভিযোগের পর প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোসহ দেশের বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলোকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ না জানানোয় শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন মতাদর্শের অন্তত সাতটি শিক্ষক সংগঠন ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। এরমধ্যে শিক্ষক সমিতি সকল শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়া প্রগতিশীল ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট, জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের জিয়া পরিষদ ও সাদা দল এবং জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের গ্রীন ফোরাম ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। 

ঘটনা উচ্চ আদালতে গড়ালে সেখান থেকে পদক্ষেপ এলেও সংগঠনগুলো দলীয় প্যাডে নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে কোন বিবৃতি দেয়নি। এরমধ্যে জিয়া পরিষদ দায়সারাভাবে একটি ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সক্রিয় পাঁচটি ছাত্রসংগঠন তাদের দলীয় প্যাডে বিবৃতি দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করে। এছাড়া জাতীয় মহিলা পরিষদ, মানবাধিকার কমিশন, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানায়। 

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা শিক্ষকদের আন্তরিকতার ঘাটতির অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে তাদের দাবি, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলোর পরিবর্তে তাদের গ্রুপিং ও রাজনীতির বিষয়ে বেশী মনযোগী। শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসতো। 

বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, আমাদের মিটিংয়ে আনঅফিসিয়ালি বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছি। ছুটির কারণে আমরা তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিতে পারিনি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এটি আদালত পর্যন্ত যাওয়া উচিৎ ছিলনা। আমরা মনেকরি এটি আমাদের প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা বিষয়টি এজেন্ডাভূক্ত করেছি। আমরা অবশ্যই বিবৃতি দিব। 

বিশ^বিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখছি। এ ছাড়াও যেহেতু উচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে রায় দিয়েছে। এরপর বিবৃতি দেওয়া কঠিন। তবে প্রশাসনের কাজগুলো লক্ষ্যে রেখেছি। এক্ষেত্রে যদি আমরা ভিন্নরকম কিছু দেখি তাহলে প্রয়োজন মনে হলে আমরা বিবৃতি বা পদক্ষেপ নেব। 

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে অর্থাৎ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখানে আলাদা করে বিবৃতি দেওয়ার তো কিছু নেই। যদি কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হতো তাহলে আমরা কথা বলতে পারতাম। এটা প্রশাসনকে জিজ্ঞস করার বিষয় যে তারা কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা ফোরামগতভাবে প্রশাসনকে বলেছি।

সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. কে এম মতিনুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। আমরা ব্যস্ততার জন্য সংগঠন থেকে বিবৃতি দিতে পারি নি। তবে শিক্ষক সমিতিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করেছি। বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ ছিল বিষয়টিকে আদালত পর্যন্ত গড়ানোর আগেই সমাধান করা।

সাদা দলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. শরফরাজ নেওয়াজ বলেন, বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি খুবই যুক্তিসঙ্গত। এটি করা উচিত ছিল। আমি বলবো এটি করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। 

গ্রীণ ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব চেঞ্জ না হওয়ায় ফরমালি মিটিং করে বিবৃতি দেওয়া হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি।