তামিম ইকবালের মায়ের গল্প

তামিম ইকবালের মায়ের গল্প

তামিম ইকবাল

জীবনে কিছু দৃশ্য আছে, যা অভিনয়ে ফুঁটিয়ে তুলতে গিয়ে মনে হয়, সিনেমার সব মিথ্যা যেন সত্যি হয়ে যায়। সব ফিকশন একাকার হয়ে মিশে যায় জীবনের রঙধনু রাঙা বাস্তবতায়! মিথ্যা কান্না আর বুকের ভেতরের ব্যথা যেন আলাদা হয়ে যায়। আবেগ দিশাহীন হয়ে চোখে নোনা জলের প্রবাহ ছড়ায়।

তেমনি এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। এক ‘মায়ের গল্প’ ক্যামেরাবন্দী করতে গিয়ে তার চোখের জলে ভেসেছিলেন সদলবলে।

গল্পটা শুনবেন? গল্পটা হয়ত বাইশ গজের সাথে সম্পর্কিত নয়, কিন্তু গল্পে আছেন বাইশ গজেরই একজন।

আজ বিশ্ব ‘মা দিবসে’ সেই মায়ের গল্পটাই অমিতাভ রেজার ভাষ্য অনুযায়ীই তুলে ধরা হলো। একটি বিজ্ঞাপনের জন্য তামিম ইকবাল ও তার মায়ের সাথে কাজ করেছিলেন তিনি। শুনন সেই গল্প-

তামিম ইকবাল, বাংলার ক্রিকেটের এই তারকার সঙ্গে আমার আগেও কাজ হয়েছে, কিন্তু এবারের অনুভূতি ছিল ভিন্ন। এবারই আমি প্রথম একজন খেলোয়াড়কে অন্যভাবে দেখতে পেয়েছি। এবারের গল্পের মূল শক্তি তামিম ইকবালের মা নুসরাত ইকবাল।

মায়ের ইমেজ তো চিরায়ত। কিন্তু তামিম ইকবালের মা যেন অন্য মানুষ। আমাদের যেসব মা ভুল সময়ে সহযাত্রী স্বামীকে হারিয়ে লড়াই করে সন্তান লালন করেন, তামিম ইকবালের মা তেমনি একজন। তামিম ইকবালের বাবা ইকবাল খান ছিলেন নামী ফুটবলার। ক্রিকেটও ভালো খেলতেন। তার স্বপ্ন ছিল ছেলেরাও একদিন নামী ক্রিকেটার হবে।

স্বামীর স্বপ্নপূরণে এতটুকু কমতি রাখেননি তামিমের মা। ছেলেদের কাছে তিনিই বড় অনুপ্রেরণা। কী অসাধারণ জীবনীশক্তি দিয়ে তিনি তার সন্তানদের বিকশিত করেছেন, তা তামিম আর নাফিস ইকবালকে দেখলে বোঝা যায়।

যাইহোক, তামিম ইকবাল আর তার মায়ের অংশ শুটিং করা হয় ঢাকায়। মায়ের সঙ্গে দৃশ্য একটাই। এই ছবিতে কিন্তু তামিম ইকবালের মা নিজেই অভিনয় করেছেন। আমার প্রয়োজন ছিল এমন একটি দৃশ্য, যেখানে গর্বিত মা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরেন।

কিন্তু এমন একটি দৃশ্য কিভাবে হবে? যিনি কোনো দিন অভিনয় করেননি! কঠিন ছিল হয়ত কিন্তু তখনি মনে হলো জীবন তো আরো কঠিন। তামিম ইকবালের মা তো জীবনে কঠিন সময় কম পাড় করেননি! বাবার অবর্তমানে তার সন্তানদের বড় করেছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগে সন্তানদের পরিনত করেছেন দেশ ও জাতির সম্পদে। তার জন্য তো সেই অতীত মুহূর্তগুলো মনে করাই যথেষ্ট।

আমি যখন তাকে সেই সময়টার কথা মনে করিয়ে দিই, তখনই তিনি অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। মিথ্যা ইমেজে তার চোখের পানিটা যেন সত্যি হয়ে গেল। সেদিন ঢাকায় আমাদের শুটিং ইউনিটের সবার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিলেন চিরায়ত একজন মা।

তখনই হঠাৎ তামিম নিরবতা ভেঙে বলে উঠলেন, ‘অমিতাভ ভাই, আম্মাকে আর কাঁদতে দিয়েন না। শেষ করেন। এই শট আর নিয়েন না!’

কারণটা বুঝতে সময় লাগেনি আমার। তামিম তো কোনো সুপার হিরো না, সেও একজন সন্তান, একজন মানুষ। আর কোনো সন্তান তার মায়ের চোখের পানি দেখতে চায় না; সহ্য করতে পারে না মায়ের চোখের নোনা জল!