আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন

আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন

সংগৃহীত

আজ পহেলা আষাঢ়। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে বেশ কয়েক দিন আগে। এবার পঞ্জিকার পাতা ধরে বর্ষা হাজির হলো। বাংলা সাহিত্যের একটা বড় অংশই জুড়ে আছে বর্ষা।

মহাকবি কালীদাস মেঘদূত কাব্যে পাঠককে মুগ্ধ করেছেন আষাঢ়ের রূপে। আষাঢ় শব্দে আছে স্বপ্নাবিষ্ট এক মোহমুগ্ধতা। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের বড় অংশজুড়ে আছে বর্ষা। আষাঢ় কবিতায় তিনি আহ্বান করেছেন, ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। 

হুমায়ূন আহমেদ বলতেন, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান’- কবিগুরুর এই একটি লাইন শুনলেই আমাদের মনে তীব্র আনন্দ এবং তীব্র ব্যথা বোধ হয়। কেন হয় তা আমরা নিজেরাও ঠিক জানি না।

তবে বর্ষার প্রথম মেঘের ডাকের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের কিছু মাছের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারা পানি ছেড়ে শুকনায় উঠে আসে। মাছটির নাম কই মাছ। আমাদের দেশে এ রকম ফুল আছে, যা শুধু বর্ষাকালেই ফোটে। পৃথিবীর আর কোনো ফুলের সঙ্গে এর মিল নেই। দেখতে সোনালি গোলাকার এই ফুলটির নাম কদম। যতদিন বর্ষা থাকবে, ততদিন এই ফুল থাকবে। বর্ষা শেষ, ফুলও শেষ। 

বর্ষা ও তার অনুষঙ্গ নিয়ে আমাদের কত মিথ। বর্ষার প্রথম কদম ফুল যদি কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকাকে দেয় তা হলে তাদের সম্পর্ক হয় বিষাদমাখা। কাজেই এই ফুল কেউ কাউকে দেয় না। 

শহরের খুব কম মানুষের সঙ্গেই চাতকচাতকীর সঙ্গে পরিচয় আছে। তবে স্বপ্নজাগানো একটি গল্প সবাই জানে অদেখা ওই পাখি সম্পর্কে। পিপাসায় বুক ফেটে যেতে চায় চাতকের। দরকার তার ঠান্ডা জল। চারদিকে কত দীঘি, হ্রদ, সাগর। কত নদী সরোবর কিন্তু তাতে, কবি রামনিধি গুপ্ত প্রশ্ন করেছেন, ‘কিবা ফল চাতকীর?’

চাতকচাতকীর পিপাসা মেটে না পদ্মদীঘির জলে কিংবা ঝরনাধারায়, নদীর স্রোতে, সরোবরের টলটলে পানিতে। তার চাই মেঘগলা ঠান্ডা জল। চাতক-চাতকী ডাকে, ঠান্ডা মেঘ, কালো মেঘ, জল দাও। তোমার ধারাজল ছাড়া কিছুতেই যে পিপাসা মেটে না। একসময় নীল আকাশের কালো মেঘ গলে বৃষ্টি নামে। আকাশ থেকে রুপোর রেখার মতো নেমে আসা বৃষ্টির জল পান করে তৃষ্ণা মেটে চাতকের। চাতকীর। আর কোনো জলে, ওই নদীর, দীঘির, ঝরনার, সাগরের, সরোবরের জলে পিপাসা মেটে না তাদের। 

আবহাওয়াবিদরা বলেন, বর্ষা মানে উৎস, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু গতি পেতে শুরু করবে। বাংলাদেশের ওপর পুবালি লঘুচাপ প্রভাব ফেলে। আবহাওয়ার ব্যাকরণ মেনেই এভাবেই শুরু হয় বর্ষার চিরাচরিত পথচলা। পঞ্জিকার বর্ষা চলে আসেছে। বর্ষা পথ ভুলে গেলে অসহ্য গরমে পুড়তে থাকে মানুষ ও প্রাণিকুল। বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভর। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও খরায় কৃষি ভেঙে পড়ে। কৃষকরা আকুল হয়ে সুর তোলে, আল্লা মেগ দে, পানি দে। 

শহরের একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। বৃষ্টি শহরের ধুলোবালিকে বশ করে। আষাঢ়ের প্রথম দিনে আমরা সবাই ওই চাতকচাতকীর মতো উষ্ণ হৃদয় লয়ে দাঁড়ায়ে আছি, বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়।