নেশন্স লিগ শিরোপা জিতল স্পেন

নেশন্স লিগ শিরোপা জিতল স্পেন

সংগ্রহিত ছবি।

আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলল ঠিকই; কিন্তু প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে যথেষ্ট পরীক্ষায় ফেলতে পারল না কোনো দল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরিয়ে ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। অবশেষে টাইব্রেকারে বাজিমাত করল স্পেন। উনাই সিমোনের অসাধারণ নৈপুণ্যে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নেশন্স লিগের শিরোপা জিতল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

রটারডামে রবিবার (১৮ জুন) ১২০ মিনিটের লড়াই গোলশূণ্যভাবে শেষ হওয়ার পর গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। সেখানে ৫-৪ ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল।

দুই দলই প্রথম তিন শটে জালের দেখা পায়। ক্রোয়েশিয়ার চতুর্থ শট নিতে এসে ব্যর্থ হন লভরো মাইয়ের, তার শট ঝাঁপিয়ে পড়া অবস্থায় পা দিয়ে আটকান সিমোন।

এরপর মার্কো আসেনসিও জালে বল পাঠালে এগিয়ে যায় স্পেন।

ক্রোয়েশিয়ার চতুর্থ শট নেওয়া ইভান পেরিসিচ সফল হলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-৪, কিন্তু একটি শট তখন হাতে ছিল স্পেনের। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ট্রেবল জয়ী সফল হলে শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেত তাদের, কিন্তু ক্রসবারে মেরে বসেন তিনি। নতুন করে আশা জাগে কাতার বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালিস্টদের।

তবে আবারও সিমোনের দৃঢ়তা এবং ব্রুনো পেতকোভিচের ব্যর্থতায় ভেস্তে যায় তাদের সব আশা। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে তার শট ঠেকিয়ে দেন আথলেতিক বিলবাওয়ের গোলরক্ষক। এরপর দানি কারভাহাল লক্ষ্যভেদ করতেই উল্লাসে ফেটে পরে স্পেনের সবাই।

২০১০ সালের বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন তিনবার জিতেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। তাদের সবশেষ শিরোপা সাফল্য ধরা দেয় ২০১২ সালে, ইউরো।

১১ বছর বাদে ফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মিষ্টি স্বাদ পেল তারা।

কখনো বড় কোনো শিরোপা জিততে না পারা ক্রোয়েশিয়া এবার দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল। সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪-২ ব্যবধানে জয়েই মূলত তা আরও বাড়ে।

কিন্তু গোলরক্ষকের ভুলে দশম মিনিটেই গোল খেতে বসেছিল তারা। বাঁ দিকের সাইডলাইন থেকে ক্রস বাড়ান ফাবিয়ান রুইস, কোনো হুমকিই ছিল না তাতে। কিন্তু বল ধরতে গিয়ে তালগোল পাকান দমিনিক লিভাকোভিচ। ভাগ্য ভালো, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গোললাইন থেকে ফেরান তিনি।

দুই মিনিট পর আবারও তাদের সীমানায় স্প্যানিশদের হানা। এবার বক্সের মুখ থেকে নিচু শট নেন তরুণ মিডফিল্ডার গাভি, জায়গা থেকে নড়তেও পারেননি লিভাকোভিচ। তবে বল পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে হাফ ছাড়ে ক্রোয়াটরা।

২৩তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে সুযোগ তৈরি হয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার। সতীর্থের বাড়ানো থ্রু বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে নাগালেও পেয়ে যান আন্দ্রেই ক্রামারিচ, কিন্তু মুহূর্ত দেরি করে ফেলেন তিনি। পেছন থেকে দুর্দান্ত ট্যাকলে ক্লিয়ার করেন ম্যানচেস্টার সিটির ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত।

আট মিনিট পর তাদের সামনে আবারও সুযোগ আসে। ডান দিক থেকে উঁচু করে বক্সে বল বাড়ান লুকা মদ্রিচ, সবার উপরে লাফিয়ে হেড করেন ইভান পেরিসিচ। ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক উনাই সিমোন।

প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে চারটি শট নিয়ে তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পারে ক্রোয়েশিয়া। বিরতির পরের প্রথম পাঁচ মিনিটে ভালো দুটি আক্রমণও করে তারা; কিন্তু প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরীক্ষায় ফেলার মতো কিছু করতে পারেনি।

অন্যদিকে, প্রথমভাগে ৬ শট নিয়ে একটিও লক্ষ্যে রাখতে না পারা স্পেন ৫৭তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পায়। কিন্তু এবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করে হতাশ করেন মার্কো আসেনসিও।

৮৫তম মিনিটে ডেডলক ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান আনসু ফাতি। বাঁ থেকে মিকেল মেরিনোর বাড়ানো পাস ফাঁকায় পেয়ে যান তিনি, কিন্তু যথেষ্ট জোরে শট নিতে পারেননি তিনি। গোলরক্ষককের পাশ থেকে কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন পেরিসিচ।

অতিরিক্ত সময়ের দশম মিনিটে ক্রোয়াটদের আরেকটি সম্ভাবনাময় পাল্টা আক্রমণ ভেস্তে যায় স্প্যানিশদের দারুণ রক্ষণে। সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে গতিতে পেছন ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন মাইয়ের, তবে তার শট নেওয়ার আগমুহূর্তে দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জে আটকান রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার নাচো ফের্নান্দেস।

বাকিটা সময়ও পেরিয়ে যায় ওই একইভাবে, একের পর এক ব্যর্থ আক্রমণে।

রোমাঞ্চের সবটুকুই যেন বরাদ্দ ছিল স্নায়ুচাপের টাইব্রেকারে। যেখানে নায়ক হয়ে উঠলেন সিমোন। আরো একবার স্বপ্ন ভাঙার কষ্টে মাঠ ছাড়ল ক্রোয়েশিয়া।