দেশীয় পণ্যের প্রতি দেশপ্রেম

দেশীয় পণ্যের প্রতি দেশপ্রেম

ফাইল ছবি।

দেশপ্রেম হলো নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি। দেশপ্রেম প্রদর্শন করা—‘দেশপ্রেমিক’ হওয়া আক্ষরিক অর্থেই ‘ভালো নাগরিক’হওয়ার প্রয়োজনীয়তাগুলোর মধ্যে একটি। দেশপ্রেম একটি দেশে বসবাসকারী সকলের জন্য নাগরিক ও নৈতিক কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত এবং দীর্ঘকাল ধরে তা হয়ে আসছে। এটি একটি আদর্শ নাগরিক হওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত হয় এবং যারা জনসমক্ষে দেশপ্রেমিক হিসেবে আত্মপরিচয় দেয় না তাদের প্রায়ই বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই দেশপ্রেম প্রকাশ শুধু জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের মধ্যে অন্তর্নিহিত নয়, দেশে তৈরি উৎপাদিত পণ্যের ক্রয় ও ব্যবহারের মধ্যেও এর ভালোবাসা নিহিত আছে। 

 

অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে আরো শক্তিশালী করার জন্য দেশের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। সংক্ষেপে একে বলে এসএমই।

উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে এসএমই খাতের গড় অবদান যেখানে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি সেখানে বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান শতকরা ২৫ ভাগ এবং শিল্প কর্মসংস্থানে শতকরা ৮০ ভাগ অবদান রাখছে। কাজেই এসএমই খাত অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে সেই ১৯৫৭ সালে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী থাকাকালে ইস্ট পাকিস্তান কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন বা ইপসিক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বাংলাদেশে পরবর্তী সময়ে বিসিক নামে পরিচিতি পায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে এসএমই খাত।

জাতির পিতার প্রতিষ্ঠিত এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকেই আমাদের দেশের উন্নয়নের প্রাণ হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ আর লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে আমাদের সোনার বাংলাদেশ। সে দেশের জনগণ, আমরা দেশি পণ্য কিনতে লজ্জাবোধ করি। বাজারে, শপিং মলগুলোতে গিয়ে আমরা খোঁজ করি বিদেশি পণ্য। মেড ইন বাংলাদেশের প্রতি আমাদের অনীহা।

আমরা দুবাই যাই, থাইল্যান্ড আর সিঙ্গাপুর যাই, অথচ আমাদের দেশের তৈরি পণ্যই বিদেশের মাটিতে অন্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে মেড ইন বাংলাদেশ নিয়ে গর্বের সাথে টিকে আছে। সে লক্ষ্যে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা জরুরি। মান নির্ধারণী কর্তৃপক্ষের মনিটরিং নিয়মিত রাখতে হবে। দেশকে সমৃদ্ধিশালী করতে সে দেশের নিজ পণ্যের প্রচার এবং প্রসার সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে হাজার হাজার দেশি পণ্য রয়েছে, তাই এই পণ্যগুলোকে যদি ভালোভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা যায় তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিতে দেশি পণ্য অবদান রাখতে পারবে।

বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছয় ২০১৫ সালে। এরপর আট বছর পার হয়েছে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে রয়েছে এখন বাংলাদেশ। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এটা সত্য যে এই স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের সামনে এখনো অসংখ্য বাধা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২০১৭ সালে এডিবি ইনস্টিটিউট, ‘ট্রানজিশন ফ্রম লো-ইনকাম গ্রোথ টু হাইয়ার ইনকাম গ্রোথ : ইজ দেয়ার আ মিডল ইনকাম ট্র্যাপ’ শীর্ষক এক বিস্তর গবেষণায় জানিয়েছে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশীয় শিল্পায়নের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। দেশীয় শিল্পায়ন তখনই আরো বেগবান ও অর্থবহ হবে আমরা যখন এই বিদেশনির্ভর পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দেশীয় পণ্যের অধিক ব্যবহার শুরু করব। 

আমাদের মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের টেলিভিশন আছে, মোবাইল-ল্যাপটপ আছে, মোটরসাইকেল, এয়ারকন্ডিশন আছে; কিন্তু আমরা এসব ক্রয় করি না, ব্যবহার করি না। আমরা স্যামসাং, জেনারেল বা হিরো হোন্ডা বাজাজেই বেশি অভ্যস্ত। আমরা দেশের জন্য অনেক বড় বড় কথা বলি, কিন্তু বাজারে গিয়ে যদি বিদেশি পণ্য কিনি তাহলে দেশ কিভাবে সমৃদ্ধ হবে? দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য, দেশের অর্থনীতিক আরো শক্তিশালী করার জন্য দেশীয় শিল্পের বিকাশ প্রয়োজন। সমষ্টিগতভাবেই এর জন্য জোর দিতে হবে। আমাদের আমদানিনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। তবে উৎপাদন বাড়াতে যন্ত্রাংশ আমদানিকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। সরকার শিল্পায়নের ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে। শিল্প জোন করছে। আবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। দেশীয় শিল্পের বিকাশ ধরে রাখতে বর্তমান সরকার অনেক পণ্যে এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত যাতে কোনো ভ্যাট দিতে না হয় সে ব্যবস্থা নিয়েছে ।

শুধু তা-ই নয়, আমদানির বিকল্প শিল্পোৎপাদনকে ত্বরান্বিত করার স্বার্থে ও মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের দেশের অটোমোবাইল-থ্রি হুইলার এবং ফোর হুইলার উৎপাদনকারী কম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্য সস্তা হবে এবং গ্রাহক কম দামে পণ্যগুলো ক্রয় করতে পারবে। এর সাথে প্রয়োজন আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের চেতনা, আমাদের দেশপ্রেম। দেশি পণ্যের প্রতি ভালোবাসা। অন্তরে মেড ইন বাংলাদেশ ধারণ করা।

পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদিত পণ্যকে মাথায় রেখে আমদানি নীতিমালা প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হচ্ছে । সেই লক্ষ্যে কাঁচামাল আমদানিতে বাধাসমূহ অপসারণ ও সহজীকরণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান বাজেটে দেশের ভেতর যেসব পণ্য উৎপাদন করা যায়, সেগুলো বিদেশ থেকে আনা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় কম্পানি বা উদ্যোক্তারা সুবিধা পাবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বর্ধিত হবে। স্থানীয় শিল্পের বিকাশের স্বার্থে শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে ।

দেশীয় উৎপাদকদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই সকলের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছে। প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তিপণ্য খাতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং স্থানীয় উৎপাদকদের সুবিধা দেওয়ায় দেশে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, টেলিভিশন, ল্যাপটপ-কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি শিল্পের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে। অনেক দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করেছে। এসব পণ্যের উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে। তৈরি পোশাকের মতো ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি পণ্য শিল্প রপ্তানি আয়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠেছে। 

আমদানি বিকল্প শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, দেশীয় ও রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের স্থান সুদৃঢ় করাসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিকশিত করার জন্য রপ্তানি নীতিমালার ভূমিকা অনস্বীর্কায। মেরুদণ্ড শক্তিশালী না থাকলে সোজা হয়ে দাঁড়ানো যায় না। অর্থনীতি একটা দেশের মেরুদণ্ড। অর্থনীতি শক্তিশালী না হলে অন্যের সাহায্যে চলতে হবে। বিদেশনির্ভর ঋণের ওপর চলতে হবে। মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পেছনে চড়া সুদ আর ঋণের শর্তে উন্নয়ন হবে বাধাগ্রস্ত। স্থানীয় শিল্পের প্রসার বা রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে আমদানিনীতি আদেশটি আগের যেকোনো আদেশের তুলনায় সহজ করা প্রয়োজন। । নতুন পদক্ষেপের পাশাপাশি আমদানির সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণে কিছু কড়াকড়িও আরোপ করা প্রয়োজন । চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানোর নানা ছোট-বড় সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন । 

করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে, তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে বিশ্বের দেশে দেশে মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে যে কেবল আমাদের মতো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিলাসী পণ্যের আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। গত দুই মাসে বিলাসী পণ্যের এলসি প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আমাদের অধিকাংশের জীবনে বিলাসী পণ্য ব্যবহারের সুযোগ খুবই সীমিত, অনেকের কাছে সেটা সম্ভবই নয়। কিন্তু বিলাসী পণ্যের আমদানির জন্য যদি অনেক ডলার ব্যয় হয়, তাহলে এর প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে পরোক্ষভাবে হলেও পড়ে। বিলাসী পণ্যের সম্পূরক দেশীয় শিল্পের বিকাশও অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত পণ্য প্রথম থেকেই বর্জন করি, তাহলে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে দক্ষতা ও ব্যয় কুশলতা অর্জন করতে হিমশিম খাবে। 

দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশীয় পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বিধিতে দেশীয় পণ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। এটাকে রেগুলার অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। নিজের দেশকে, পণ্যকে প্রমোট করতে দেশের প্রতি দায়িত্বকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। দেশি পণ্যকে ব্যবহার করা মানে নিজের দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। আমাদের দেশপ্রেমের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আমরা কখনো ভাবতে চাই না, যদি একটি দেশীয় পণ্য কিনি তাহলে টাকাটা কোথায় যাবে? পণ্যটা যে বানিয়েছে বা বাজারজাত করেছে সে পাবে। কারখানার মালিক পাবে। তার শ্রমিক পাবে। আর যদি বিদেশি পণ্য কিনি তাহলে টাকাটা চলে যাবে বিদেশে। 

দেশীয় শিল্প বিকাশে সরকারের উদ্যেগ ও পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। উদহারণস্বরূপ বলা যায় লিফট বা এলিভেটরের কথা। চলতি বাজেটে লিফট বা এলিভেটর পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ খাতে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং স্থানীয় শিল্প-উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে লিফট আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে। দেশে লিফটের বিপুল চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্র মতে, করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে ৭০৭ কোটি, ২০২১ সালে ৮৮৫ কোটি টাকার লিফট আমদানি হয়েছে । সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দেশে লিফটের বাজার এক হাজার ২০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর এ খাতের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশেরও বেশি। আমদানির মাধ্যমে লিফটের স্থানীয় চাহিদা মেটানোয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। বর্তমানে দেশীয় দু-একটি প্রতিষ্ঠান দেশে লিফট উৎপাদন প্লান্ট গড়ে তুলেছে। আমাদের উৎপাদিত লিফট দিয়ে দেশের সব চাহিদা মেটানোর যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে তৈরি লিফট আমদানীকৃত লিফটের চেয়ে মানে অনেক উন্নত। বর্তমানে দেশের গৃহায়ণ শিল্প ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এ খাতে লিফটের চাহিদা আরো বাড়বে। দেশে উৎপাদন বাড়লে লিফট সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। পাশাপাশি পুরাতন স্থাপনাগুলোতে সহজেই লিফটসংক্রান্ত সেবা দেওয়া সহজ হবে। সব দিক বিবেচনায় সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্প ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য খুবই ইতিবাচক। 

আমাদের দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। বিশাল ও ব্যাপক আমাদের এই অভ্যন্তরীণ বাজার। দেশের স্থানীয় শিল্পকে বিকশিত করতে হলে আমদানিনির্ভরশীলতা থেকে সরে এসে দেশি পণ্য ক্রয়ে উৎসাহিত হতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যদি দেশীয় পণ্যকে ইতিবাচকভাবে দেখে তাহলে আমাদের শিল্পের উন্নয়ন হতে বাধ্য । নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে, দেশ লাভবান হবে। দেশ উন্নত হবে। যে দেশের মানুষ দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে সে দেশের মানুষের পক্ষেই সম্ভব দেশের পণ্যের প্রসারে বিদেশি পণ্যের দিকে না গিয়ে দেশীয় পণ্য ক্রয় করা, অপরকে উৎসাহিত করা কেনার জন্য। তাহলেই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাঙ্ক্ষিত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। এ জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সবার দেশি পণ্য কেনা উচিত। আমাদের দেশে নানা ধরনের সৃজনশীল পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে। যা দেশের বাইরেও বিক্রি হচ্ছে। দেশি জিনিস নিজে কেনার পাশাপাশি তা অন্যকে কিনতে উদ্বুদ্ধ করা দরকার সবার। এভাবে আপনার-আমার প্রতিদিনের হাজারো ব্যবহার্য পণ্য দিয়ে যদি আমরা শুরু করি, প্রতিজ্ঞা করি আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, আমাদের দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে, এটাই দেশপ্রেম । একটু না হয় ছাড় দিলাম। দেশীয় কম্পানিকে উদ্বুদ্ধ করা জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়াই যায়। একবার চেষ্টা করে দেখা যেতেই পারে। আমরা সবাই যদি আমাদের প্রতিদিনকার ব্যবহারের একটি করে বিদেশি কম্পানির পণ্য ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে আমাদের দেশীয় কম্পানির পণ্য ব্যবহার করি, তাতে লাভ হবে দেশের। আমাদের ১৮ কোটি জনগণের দেশপ্রেমে বাজার হারাবে বিদেশি কম্পানিগুলো, দেশি কম্পানিসমূহের উৎপাদন বাড়বে, দেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে । এভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, একটি সুন্দর আগামীর পথে।

পরিচালক,
বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট লিমিটেড