হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ: মুজদালিফায় জড়ো হচ্ছেন হাজিরা

হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ: মুজদালিফায় জড়ো হচ্ছেন হাজিরা

সংগৃহীত

পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা এখন শেষ পর্যায়ে। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে লাখ লাখ হাজি পবিত্র আরাফাত ময়দান থেকে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হয়েছেন। পবিত্র হজের খুতবায়, সামাজিক ঐক্য সুদৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন আরাফাতের ময়দানের খতিব। আল্লাহ্ এবং রাসুলের প্রতি আনুগত্য রেখে মুসলিম উম্মাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আহ্বান জানান তিনি। পরে মোনাজাতে বিশ্ব মানবতার মঙ্গল কামনা করেন সমবেত হাজিরা।

হজের ইতিহাসে সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি, সারাবিশ্বের ২৫ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে এবারের হজ হচ্ছে। আরাফাতের পবিত্র ময়দানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২৫ লাখ মুসল্লি নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।

আরবি আরাফাত শব্দের অর্থ পরিচিতি। পবিত্র এ ময়দানেই মহা মানব আদম আলাই হি ওয়া সাল্লাম এবং হাওয়া আলাই হা ওয়া সাল্লামের প্রথম দেখা হয়। ইহজগতের সব চাহিদা বিসর্জন দিয়ে পাপমুক্তির আকুল প্রার্থনায় মুসলমানরা জমায়েত হন তিন দিকে পাহাড়ঘেরা দু’মাইল দীর্ঘ এবং দু’মাইল প্রস্থ আরাফাতের প্রান্তরে।

আরাফাতের জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়ের চূড়া যেখানে আদম এবং হাওয়ার পরিচয় হয়েছিল তার পাদদেশে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। ভাষণে মানুষ হিসেবে সবার সমান মর্যাদা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলা হয়েছিল। সেই ইতিহাস ধারণ করে প্রতি বছর লাখো মুসল্লি আরাফাত ময়দানে হাজির হন।

হজের আনুষ্ঠানিকতার মূল অনুষঙ্গ, পবিত্র আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিয়েছেন শায়েখ ডক্টর ইউসুফ বিন মোহাম্মদ বিন সাইদ।

মঙ্গলবার ২৭ জুন বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় হজের খুতবা শুরু হয়। খুতবায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে খতিব শায়খ ইউসুফ বিন মোহাম্মদ বলেন, আল্লাহ মহান ও প্রজ্ঞাবান। তিনি অনৈক্য ও ভেদাভেদ হারাম করেছেন। পবিত্র কুরআনে ঐক্য ও সংহতির গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। ঐক্যের মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের সব বিষয়ের সাফল্য নিহিত। মুসলমানদের পরস্পর মিলেমিশে থাকা জরুরি।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে কুরআনের বিষয়ে অনৈক্য করবে, সে হেদায়াত থেকে দূরে সরে গেল।

যদি আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়, তাহলে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুরআনে কারিমে মুসলমানদের একসাথে মিলেমিশে বসবাস করার হুকুম দেয়া হয়েছে।

খুতবার শেষের দিকে আরাফাতের মসজিদে নামিরা থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। ২২ মিনিটের খুতবা শেষে এ বছর আরাফাতের ময়দানে খতিব আনুষ্ঠানিক কোনো মোনাজাত করেননি। আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে সব হাজি এক সঙ্গে যোহর এবং আসরের নামাজ আদায় করেন।

সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত এ ময়দানেরই হাজিরা ইবাদত বন্দেগিতে মসগুল ছিলেন। হজের নিয়ম অনুযায়ী সূর্যাস্তের সাথে সাথে হাজিরা পরবর্তী গন্তব্য ৫ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় হাজির হচ্ছেন। মুজদালিফায় মাগরিব এবং এশার নামাজ আদায় করে সেখানেই খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছেন আল্লাহর মেহমানরা। সেখান থেকে শয়তানকে মারার জন্য তারা প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন।

বুধবার ফজরের নামাজ আদায় করে আল্লাহর মেহমানরা আবার যাবেন মিনায়। মিনায় ৩ দিন অবস্থান করে শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর মারবেন হাজিরা।