ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে শতভাগ ডাবললাইনের উদ্বোধন আজ

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে শতভাগ ডাবললাইনের উদ্বোধন আজ

ছবিঃ সংগৃহীত।

দেশের প্রধানতম রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ এই রেল রুটটিতে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন সার্ভিস চালাতে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয় এক দশক আগেই। ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের প্রায় সবটুকু ডাবল লাইন হলেও বাকি ছিল লাকসাম-আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার। আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) উদ্বোধনের মাধ্যমে এই রুটে বিরতিহীন ভাবে ট্রেন সার্ভিস শুরু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ভ্রমণে সময় বাঁচবে অন্তত ৩০ মিনিট। 

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি সবচেয়ে কম সময়ে যাত্রীবাহী ট্রেন যায় ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস বিরতিহীন ভাবে দ্রুত সময়ে ৩২১ কিলোমিটার দূরত্বে যাত্রী পরিবহন করে। এই রেলপথের প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার ডাবললাইন ট্র্যাক থাকলেও প্রকল্প চলমান থাকায় লাকসাম-আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার একটি মাত্র লাইনের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল করতো। প্রকল্প কাজের জন্য গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ থাকায় নির্ধারিত ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের পরিবর্তে দেশের প্রধান দুই শহরের মধ্যে দ্রুতগামী ট্রেনগুলোও পৌঁছাতে ৩০ থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগতো। নতুন প্রকল্পটি উদ্বোধন হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ৫ ঘণ্টারও কম অর্থাৎ সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রেন পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তারা। 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আখাউড়া-লাকসাম রেল সেকশনের ডাবললাইন প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। লাকসাম স্টেশনে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন উপস্থিত থেকে প্রকল্পটি উদ্বোধন সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।  এর আগে ২০১৫ সালে লাকসাম-চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার ডাবললাইন এবং ২০১৬ সালে টঙ্গী-ভৈরববাজার  পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার রেলপথ ডাবললাইন চালু করা হয়। শতভাগ ডাবললাইন হয়ে যাওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মাধ্যমে পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ট্রেনের ভ্রমণ সময় কমে আসা, ট্রেন দুর্ঘটনার হারও অনেক কমে আসবে বলে মনে করছে রেলওয়ে।

আখাউড়া-লাকসাম সেকশন ডুয়েলগেজ ডাবললাইন উন্নীতকরণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন  বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ শতাংশ। ইতোমধ্যে ৭২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সকল গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ তুলে দিয়ে ডাবললাইনে ট্রেন চালানো হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০ জুলাই থেকে সবগুলো ট্রেন ডাবললাইনে চালানো হবে। এতে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথটি দিয়ে ট্রেন সার্ভিস পরিচালনায় পরিবহন ব্যয়, সময় ও রেল সেবার মান পূর্বের চেয়ে বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া-লাকসাম অংশ ডাবললাইনে উন্নীত করতে ২০১৪ সালে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। ২০২০ সালে কাজ সমাপ্তের লক্ষ্য ছিল। তবে দুই দফা মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্প ব্যয় কমছে। সংশোধিত ডিপিপিতে (আরডিপিপি) প্রকল্প ব্যয় ৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। এর আগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধায় দুই বছরে ৫ বার প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। তবে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হয়।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পের কসবা-মন্দবাগ অংশে নবনির্মিত ডুয়েলগেজ  রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। ওই দিনই বিএসএফের বাধায় বন্ধ হয়ে যায় মন্দবাগ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরবর্তী সালদা নদীতে সেতু নির্মাণকাজ। এই সেতুটি ছাড়াও প্রকল্পের মধ্যে থাকা দুটি স্টেশনের নির্মাণ কাজ প্রায় আড়াই বছর বন্ধ ছিল। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর গত ১২ মার্চ থেকে প্রকল্পের কাজ ফের শুরু করে রেলওয়ে। এক বছরের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড সহ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে প্রকল্পটির।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পরিবর্তনজনিত কারণে আলোচিত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে এ পর্যন্ত ৭ জন পিডি পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন ৮ম পিডি হিসাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে যাচ্ছেন। প্রকল্পটির মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার। বাংলাদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ পেয়েছে যথাক্রমে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রকল্পের আওতায় ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেল ট্র্যাক, ১৩টি বড় সেতুসহ মোট ৪৬টি ছোট-বড় সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই রুটে কম্পিউটারাইজড সিগন্যালিং ব্যবস্থাসহ আখাউড়া ও লাকসাম রেলস্টেশন-সহ ১১টি বি-ক্লাস রেলস্টেশন নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। 

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টকে প্রকল্পের প্রতিবন্ধকতার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় সময় বৃদ্ধি ছাড়াও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চিঠি দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে আসলেও সেকশন-১ এ ১৬টি এবং সেকশন-২ এ ২৭৮টি প্রতিবন্ধকতাসহ প্রকল্প এলাকায় সর্বমোট ৩২১টি অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে দাবি করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব কারণে ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দাবি করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এই প্রস্তাব মেনে নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীয় বাধা, করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত  লকডাউন এবং ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হতে প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করে।