বাংলাদেশ-ভারত রূদ্ধশ্বাস ম্যাচে কেউ হারেনি

বাংলাদেশ-ভারত রূদ্ধশ্বাস ম্যাচে কেউ হারেনি

বাংলাদেশ-ভারত রূদ্ধশ্বাস ম্যাচে কেউ হারেনি

জিততে জিততে হেরে যাওয়ার বেদনায় অনেকবার পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। অসংখ্যবার তীরে এসে তরি ডুবেছে। যার বেশিরভাগই ছিলো ভারতের বিপক্ষে। এবার সেই ভারতকেই তীরে এসে ডুবালো বাংলাদেশ, জয়ের সুবাস পেলেও স্বাদ পেল না তারা। যদিও জিততে পারেনি বাংলাদেশও, টাই করেই থাকতে হয়েছে সন্তুষ্ট।

শনিবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারত নারী দলের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে উভয় দল একটি করে জয় পাওয়ায় এই ম্যাচটা ছিল অঘোষিত ফাইনাল। যেখানে আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২২৫ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ভারত থামে সমান ২২৫ রানেই!

ফলে এই ম্যাচে জেতেনি কেউ, আবার কেউ হারেওনি। সেই সাথে শিরোপারও হলো না নিষ্পত্তি, সিরিজ থেকে গেল সমতায়। তবে এই টাইও বাংলাদেশের কাছে জয়ের সমানই বলা যায়।

মিরপুরে আগে ব্যাট করে ফারজানার ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরি (১০৭) আর শামীমা সুলতানার ৫২ রানে ৪ উইকেটে ২২৫ রান বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৯৩ রান। শামিমা আউট হলে অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে সাথে নিয়ে ফারজানা এগিয়ে নিয়ে যান দলকে।

অধিনায়ককে অপরপ্রান্তে পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠেন ফারজানা। শুরুটা ধীরলয়ে হলেও এই সময় ফিরে পান ছন্দ। রান করেন বলের সাথে পাল্লা দিয়েই। জুটিতে আসে ৮৫ বলে ৭১ রান যোগ করেন ফারজানা। নিগার ফেরেন ২৪ রান করে। এরপর রিতু (২) দ্রুত ফিরলেও হাল চতুর্থ উইকেট জুটিতে সুবামা মোস্তারির সাথে যোগ করেন আরো অর্ধশত রান।

৪৯ বলে ৫৬ রানের এই হার না মানা জুটিতে দুই শ’র ঘর পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। ইনিংস থামে ৪ উইকেটে ২২৫ রানে, যা ওয়ানডের নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তবে ততক্ষণে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি তুলে নেন ফারজানা। ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন সুবানা।

লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ভারতকে শুরুতেই বিপদে ফেলেন মারুফা আক্তার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ১ রানেই ফেরাতে পারতেন স্মৃতি মান্দানাকে, তবে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন জ্যোতি। তবে এক বলের ব্যবধানে আরেক ওপেনার শেফালি ভার্মাকে (৪) ফেরান মারুফা।

এরপর ইয়াস্তিকা ভাটিয়াকে (৫) দ্রুত ফিরিয়ে জুটি বড় হতে দেননি সুলতানা খাতুন। ৩২ রানে ২ উইকেট হারানো ভারতকে এরপর পথে রাখেন স্মৃতি মান্ধানা ও হারলিন দেওল। দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১০৭ রান যোগ করেন। ৮৫ বলে ৫৯ রান করা মান্ধানাকে ফেরান ফাহিমা খাতুন।

অধিনায়ক হারমনপ্রীত কৌর অবশ্য ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে মান্ধানার পর হারলিনের ফিফটিতে জয়ের পথেই থাকে ভারত। ৩৮ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ভারতের রান যখন ১৭৩ তখন নামে বৃষ্টি।

বৃষ্টির পর খজেমাইমাহ রদ্রিগেজকে নিয়ে সঠিক পথেই এগোচ্ছিলেন হারলিন দেওল। তবে দলীয় ১৯১ রানে হারলিন রান আউটে কাটা পড়েলে তাতে বাধা পড়ে। আউট হবার আগে দেওল করেন ১০৮ বলে ৭৭ রান। ১ রানের ব্যবধানে দিপ্তি শর্মাও (১) ফিরে যান রান আউটে। টানা ২ রান আউটে ৪ উইকেটে ১৯১ থেকে ৬ উইকেটে ১৯২ রানে পরিণত হয় ভারত।

তবুও ২২৬ রানের লক্ষ্য বিবেচনায় কাজটা সহজই ছিল ভারতীয় ব্যাটারদের জন্য। মাঠে ছিলেন তখনো জেমাইমাহ। এমতাবস্থায় শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন দেখা দেয় মোটে ১৪ রানের। কিন্তু রাবেয়া খানের করা ৪৭তম ওভারে আসে মাত্র ৪ রান, সাথে শেষ বলে ফেরান আমনজট কৌরকে (১০)।

পরের ওভারে নাহিদা মাত্র ১ রান খরচ করেন নাহিদা, তুলে নেন ২ উইকেট। ৯ উইকেটে ২১৭ রানে পরিণত হয় সফরকারীরা। শেষ ১২ বলে প্রয়োজন তখন ৯, তখনো বহাল তবিয়তে জেমাইমাহ। তবুও ৪৯তম ওভার থেকে আসে ৬ রান। শেষ ওভারের সমীকরণ মাত্র ৩ রান, হাতে ১ উইকেট।

মারুফা আক্তারের করা প্রথম দুই বলে সিঙ্গেল নেয়জেমাইমাহ-মেঘনা। শেষ ৪ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ১ রান। তবে তৃতীয় বলে মেঘনাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন মারুফা, তাতে টাই হয়েছে ম্যাচ। নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা জেমাইমাহ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৪৫ বলে ৩৩ রানে।