চট্টগ্রামে বন্যায় ১৬ জনের প্রাণহানি, ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

চট্টগ্রামে বন্যায় ১৬ জনের প্রাণহানি, ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সংগৃহীত

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে চট্টগ্রামে অন্তত ১৬ জন নিহত। এ সময় ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব মিলিয়ে ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া উপজেলার।

বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলা ও মহানগরীতে মোট ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন।

মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সাফুল্লাহ মজুমদার জানান, নিহতদের মধ্যে সাতকানিয়ায় সাতজন, লোহাগাড়ায় চারজন, চন্দনাইশে দুইজন, বাঁশখালীতে একজন, রাউজানে একজন এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের হিসাব মতে, সাতকানিয়ায় সাড়ে ২২ হাজার পরিবার, চন্দনাইশে পাঁচ হাজার, পটিয়ায় ১৬ হাজার ৫৯৫ ও লোহাগাড়ায় চার হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার নলকূপগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় দেড় লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ১৪টি উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার ১২টি পারিবারের ছয় লাখ ৩৫ হাজার ১৩০ জন লোক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এর মধ্যে কেবল সিটি করপোরেশনে ৮০০ পরিবারের চার হাজার জন পানিবন্দি ছিলেন।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং ও পতেঙ্গা এলাকার ৫ হেক্টর জমিতে লাগানো আউশ ধান, ২০ হেক্টর জমিতে লাগানো আমনের চারা ও ১৪০ হেক্টর জমিতে লাগানো সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ১৫ উপজেলায় ৩৩২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বীজতলা ৬ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে। এসব উপজেলায় কিছুদিন আগে ৫১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয় আমনের চারা। এরমধ্যে ১৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে নতুন লাগানো চারার ক্ষতি হয়েছে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, গত এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, লোহাগাড়া, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় উৎপাদিত আউশ ধান ও সম্প্রতি লাগানো আমনের চারা পানিতে ডুবে গেছে। পাশাপাশি সবজির আবাদ পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আশা করছি, বীজতলা থেকে পানি সরে যাওয়ার পর সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা করলে আমনের আবাদ থেকে ভালো ফসল পাওয়া যাবে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ৬৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ আগস্ট ৪২.৮ মিলিমিটার, ৫ আগস্ট ৬৪.২ মিলিমিটার, ৬ আগস্ট ২৩১.৫ মিলিমিটার এবং ৭ আগস্ট ২১৬.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।