টেকনাফে আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম'সহ আটক ৬ ডাকাত

টেকনাফে আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম'সহ আটক ৬ ডাকাত

ছবিঃ সংগৃহীত।

অস্ত্র তৈরীর কারখানায় ও ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযানে মূলহোতা ফয়সাল’সহ ডাকাত চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব, বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র-অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার।

কক্সবাজার টেকনাফের হ্নীলা ইউপির রঙ্গীখালি দূর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরীর কারখানা সহ ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে মূলহোতা ফয়সাল’সহ ডাকাত চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব এ সময় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র- অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে র‌্যাব ১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মোঃ আবু সালাম চৌধুরী।

তিনি জানান, কক্সবাজার সহ টেকনাফ থেকে শুরু করে হ্নীলা অঞ্চলের যে গহীন পাহাড়ে একাধিক ডাকাত চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে। সকল ডাকাত চক্র প্রতিনিয়ত এলাকাবাসী থেকে শুরু করে আগত পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানিসহ খুন, অপহরণ ধর্ষণ ও অপরাধ সংঘটিত করে আসছে।

তারই ধারাবাহিকতায় গত (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিধানিক দল টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালি এলাকার গহীন পাহাড়ে অবস্থানরত একটি ডাকাত চক্র ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করে এবং ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান পরিচালনার সময় একটি অস্ত্র তৈরীর কারখানা আবিষ্কার করে। র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি টের পেলে ডাকাত দলের সদস্যরা র‌্যাবের আভিযানিক দলের উপরে গুলি বর্ষন করে এবং এদিক-ওদিক দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে।

এ সময় পলায়নকালে ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর মূলহোতা ফয়সালকে র‌্যাবের আভিযানিক দল গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ফয়সাল, ডাকাত দল চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের আভিযানিক দল টেকনাফের রঙ্গীখালির বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বদি, কবির, সৈয়দ হোসেন, দেলোয়ার এবং মিজানুর’কে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানে তাদের তৈরীকৃত অস্ত্রের কারখানা হতে ২টি একনলা বড় বন্দুক, ৪টি এলজি, ১টি অর্ধনির্মিত এলজি, ৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, ১টি ড্রিল মেশিন, ১টি আগুন জ্বালানো মেশিন, ২টি লেদ মেশিন, ২টি বাটাল, ১টি শান দেয়ার রেত, ২টি লোহার পাইপ, ২টি প্লাস, ১টি কুপি বাতি এবং ০৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, উপজেলার হ্নীলা ইউপির রঙ্গীখালী এলাকার গুরা মিয়া ছেলে ফয়সাল উদ্দিন ফয়সাল ওরুপে ফয়সাল, সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার নজির আহমদের ছেলে বদি আলম ওরুপে বদাইয়া, আলীখালী এলাকার জানে আলম ছেলে কবির আহাম্মদ, বাছা মিয়া ছেলে সৈয়দ হোসেন, বনি আমিনের ছেলে দেলোয়ার হোসন, উলুছামারি কুনারপাড়ার জাহিদ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান।

র‌্যাব ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চক্রটি টেকনাফের দূর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল ডাকাতের নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্র ব্যবসা ও হত্যা’সহ নানা অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও দূর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ার সেখানে গড়ে তুলে অস্ত্র তৈরীর কারখানা।

গ্রেফতারকৃত ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে অন্যান্য সন্ত্রাসী চক্রের নিকট অস্ত্র সরবরাহ’সহ নিজেদের তৈরীকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে তৈরীকৃত আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত।

গ্রেফতারকৃত ডাকাত চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে সশস্ত্র হামলারও তথ্য পাওয়া যায়। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নানাবিধ অপরাধের পাশাপাশি ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্ধি করে রাখতো এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়া হতো, চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজনকে হত্যাও করেছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।