মৃত্যুর আগে প্রিগোজিনকে সর্তক করেছিলেন লুকাশেঙ্কো

মৃত্যুর আগে প্রিগোজিনকে সর্তক করেছিলেন লুকাশেঙ্কো

ফাইল ছবি

রাশিয়ার মস্কোয় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত রুশ ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন ও সহপ্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উটকিনকে আগেই সতর্ক করেছিলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। এমনকি তিনি ওয়াগনার যোদ্ধাদেরকে বেলারুশেই থাকার অনুরোধও করেছিলেন।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বেলারুশের এক সংবাদ সংস্থায় সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ওয়াগনার প্রধানকে দুইবার তার প্রাণনাশের হুমকি থাকার ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও তিনি বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

লুকাশেঙ্কো বলেন, গত জুন মাসে ওয়াগনারের বিদ্রোহের সময়ই তিনি প্রিগোজিনকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তিনি (প্রিগোজিন) মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে থাকলে মারা পড়বেন। জবাবে প্রিগোজিন বলেছিলেন, ‘বাদ দিন এসব, আমি মরব।’

পরে প্রিগোজিন এবং তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে থাকা ওয়াগনার কমান্ডার দিমিত্রি উতকিন যখন লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন তখনও তিনি দুইজনকেই সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘সাবধান হয়ে যান।’ তবে ঠিক কোন সময় প্রিগোজিনের সঙ্গে এই সাক্ষাৎ হয়েছিল তা লুকাশেঙ্কোর কথায় পরিস্কার হয়নি।

প্রিগোজিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের জানাশোনা ছিল লুকাশেঙ্কোর। রাশিয়ারও ঘনিষ্ঠ মিত্রও তিনি। লুকাশেঙ্কো বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের কিছু করার ছিল না।

প্রিগোজিনের মৃত্যুর ঘটনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত থাকতে পারে, এমন মন্তব্য করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন। এ ছাড়াও মার্কিন গোয়ন্দারা দাবি করেছেন, পুতিনের নির্দেশেই প্রিগোজিনকে হত্যা করা হয়েছে।

তবে এই অভিযোগ গত শুক্রবার অস্বীকার করেছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ক্রেমলিন প্রিগোজিনকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে-এ কথা ‘পুরোপুরি মিথ্যা’।

এ বিষয়ে লুকাশেঙ্কোও রাশিয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমি পুতিনকে চিনি, জানি। তিনি হিসাবি মানুষ। খুব ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। পুতিন প্রিগোজিনকে হত্যা করেছেন, এমন কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না। এটা তার জন্য খুবই রূঢ় এবং অপেশাদার কাজ।

গত ২৩ জুন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন প্রিগোজিন। পরে লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতাতেই প্রিগোজিন বিদ্রোহ বন্ধ করেন এবং তার বেলারুশে চলে যাওয়া নিয়ে চুক্তি হয়। তার যোদ্ধাদের একাংশ বেলারুশে চলেও যায়।

বিদ্রোহের কারণে প্রিগোজিনের ওপর চটেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিদ্রোহকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। লুকাশেঙ্কো তখন পুতিনকে রাজি করিয়েছিলেন যাতে তিনি প্রিগোজিন ও তার বাহিনীকে নির্মূল করার উদ্যোগ না নেন।

বুধবার (২৩ আগস্ট) রাশিয়ায় একটি প্রাইভেট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১০ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন। বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের ওই ১০ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করার দাবি করেছেন রুশ কর্মকর্তারা। নিহতদের মধ্যে প্রিগোজিন ছিলেন। তবে রাশিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় প্রিগোজিন মারা গেছেন বলে জল্পনা ছড়ানোর পর সন্দেহের তীর উঠছে পুতিনের দিকেই।

প্রিগোজিনের বিদ্রোহের প্রতিশোধ নিতে পুতিনের নির্দেশেই তাকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পশ্চিমা অনেক দেশের। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।