আমার অনূভবে রমাদান- ১৫

আমার অনূভবে রমাদান- ১৫

ছবিঃ সংগ্রহীত

‘কুরআন কারীম’ একই সাথে বিশ্বাস, জানা ও মানার গ্রন্থ। নিশ্চয়ই কুরআন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে তার জীবন্ত উপস্থিতির দাবী নিয়েই এসেছে। পৃথিবীতে কুরআনের সেই সোনালী সমাজ এখন অনুপস্থিত। প্রশ্ন জাগে, নিদেনপক্ষে ব্যক্তি ও পরিবারে তা কীভাবে জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে? এ দু‘টি স্থানে কুরআনকে অনুপস্থিত রেখে নিজেকে কেমন মুসলিম ভাবা যায়? আমাদের সামর্থে কুরআনের আয়নায় ব্যক্তি ও পরিবারকে দেখার ন্যূনতম সুযোগও কি নেই? কিন্তু কীভাবে?

কুরআনের মাস থেকেই নিজে ও পরিবারের সদস্যদের কুরআন পড়তে ও বুঝতে শেখা এবং তা মেনে চলার পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার দায়ভারটি আমরা কাকে দিতে পারি? পরিবারের অভিভাবক হিসেবে তা কি আমরা এড়াতে পারি? বিষয়টি নিয়ে সময়মত ভাবতে পারলে এতো কঠিন হতো কী? না, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ তা‘আলার কাছে আন্তরিক সকল প্রচেষ্টার উত্তম প্রতিদান রয়েছে- যদিও মানুষের কাছে কাজ শেষেই তা দাবী করা যায়।

আমাদের সমাজে এখনও কুরআন শেখা ও বুঝার পথ অসম্ভব হয়ে যায়নি; বরং তথ্য-প্রযুক্তি তাকে অনেক সহজ করেছে। প্রয়োজন, অভিভাবক হিসেবে আগে নিজে শেখা। একইসাথে সন্তান-সন্ততি ও অন্য সদস্যদেরকে শেখানোর উদ্যোগ নেয়া। ছোটবেলায় শেখা হয়নি তার কারণ খোঁজ করা/দোষারোপ করে সময় ব্যয় করাও নিষ্প্রয়োজন। আসলে, কুরআন শেখার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। কুরআনকে জানা ও বুঝার কাজটি বিশেষ কারো জন্যও নয়। এটি এমন এক চিরন্তন ও শাশ্বত পাঠ্য যা- মুসলিম তথা মানুষ মাত্রেই জানা ও মানার দাবী রাখে।
 
যে দেশের মানুষ আবহমানকাল থেকে মিনারের আহবানে জাগতে ও ঘুমাতে শিখেছে, অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে আল্লাহর ঘরে যেতে শিখেছে, প্রতিটি জনপদে নিজের কষ্টার্জিত অর্থে ও শ্রমে দ্বীনকে ভালোবেসে লক্ষ লক্ষ মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে আসছে। সে সমাজে, সে দেশে কুরআনী আলোর অনুপস্থিতির বিষয়টি কি এমন নয় যে, একটি ঘরে বৈদ্যুতিক সকল সরঞ্জাম লাগানো হয়েছে, কেবল পাওয়ার হাউজের সংযোগটা স্থাপন করা হয়নি। সে ঘরের মানুষেরা যেমন অতি সামান্য কাজ ফেলে রাখায় সকল সুবিধাবঞ্চিত হয়; ঠিক একই কারণে আমার প্রিয় জন্মভূমির ধর্মপ্রাণ মানুষেরা কুরআনের সৌন্দর্য ও উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আসুন না ! বাবা-মা, সন্তান, প্রতিবেশি, বন্ধু-স্বজন, শিক্ষক-ছাত্র, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি তথা সমাজের মুসলিম দায়িত্বশীল হিসেবে নিজেকে কুরআনের আয়নায় একটু মিলিয়ে নিই। ক্বদরের দশকে এটিই হোক আমাদের প্রত্যাশা। (চলবে)

লেখক:  ড. মীর মনজুর মাহমুদ