মরক্কোর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে

মরক্কোর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে

মরক্কোর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে

মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮২০ জন মারা গেছে।রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়েছে যে এখন পর্যন্ত ৬৭২ জন আহত হওয়ার খবর জানা গেছে, যাদের মধ্যে ২০৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ মানুষ মারা গেছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যেখানে পৌঁছানো বেশ কঠিন।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।স্থানীয় সময় রাত ১১.১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারো ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূ- কম্পন অনুভূত হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও রাস্তায় ধ্বংসস্তূপের ভিডিও দেখা যাচ্ছে, তবে এগুলোর সত্যতা সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশেষ করে ভবন পড়ে যাচ্ছে এমন কিছু ভিডিও দেখা গেলেও বিবিসি এগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি।তবে লোকজনকে সতর্ক সংকেত শুনে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে দেখা গেছে। একজন স্থানীয় কর্মকর্তা তার এলাকাতে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন।

মারাক্কেশ শহরের পুরনো অংশে কিছু ভবন ধ্বসে পড়েছে বলে সেখানকার একজন অধিবাসী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে।"প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ভূমিকম্পে ২৯৬ জন মারা গেছে আল হৌজ, মারাক্কেশ, আজিলাল সহ কয়েকটি শহরে," স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়।

এছাড়া আরও ১৫৩ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় মানুষ বলছেন, ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পনে লোকজন এখনো ঘরের বাইরে রাস্তা বা খোলা জায়গায় অবস্থান করছে।“মানুষ ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত। শিশুরা কাঁদছে ও তাদের অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে,” আব্দেলহাক আল আমরানি বলছিলেন সংবাদ সংস্থা এএফপিকে।তিনি জানান বিদ্যুৎ ও ফোন সংযোগ প্রায় দশ মিনিটের মতো বন্ধ ছিলো। এএফপি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি পরিবারের আটকে পড়ার খবর দিয়েছে। এছাড়া অনেক মানুষকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এটলাস পর্বতমালার অনেক দূরের একটি এলাকায় হলেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে সেখান থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী রাবাত ছাড়াও কাসাব্ল্যাংকা ও এসাউইরাতে।উৎপত্তিস্থলের কাছে পর্বত এলাকার সাধারণ ভবনগুলো হয়তো টিকে নেই এবং অনেক দূরের এলাকা হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সময় লাগতে পারে।দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরেজমিন অনুসন্ধানের পর জানিয়েছে যে ভূমিকম্পে বহু পুরনো ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

রাজধানী রাবাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দেলোয়াফি লাফতিফ সংবাদ সম্মেলনে জানান যে ক্ষতিগ্রস্থদের একটা বড় অংশই রয়েছে দুর্গম এলাকায়।সেসব এলাকায় অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।মারাকেশের হাসপাতালগুলোতে বিপুল পরিমাণে মানুষ আসছে এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নাগরিকদের রক্তদান করার আহ্বান জানিয়েছে শহরের কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং মরক্কোকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ জানিয়েছেন যে তার দেশ মরক্কোকে ‘প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি মন্তব্য করেছেন যে তার দেশ সহায়তার জন্য প্রস্তুত।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র অফিসের এক বার্তায় বলা হয়েছে যে মি. নেতানিয়াহু ‘মরক্কোর মানুষকে সকল প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ’ দিয়েছেন।যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স’এ মন্তব্য করেছেন যে, “যুক্তরাজ্য সম্ভাব্য সকল পন্থায়” মরক্কোর সহায়থা করবে।এছাড়াও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ সহ বিশ্বনেতারা সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

সূত্র : বিবিসি