আমার অনূভবে রমাদান- ১৭

আমার অনূভবে রমাদান- ১৭

ছবিঃ সংগৃহীত

রমাদান এসেছে কিছু নৈমিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে। রহমানী আভায় আমাদের জীবনকে রঙ্গীন করাতে। কী অপূর্ব লক্ষ্য সাধনের এ মাস! কুরআন কারীম বলছে আল্লাহর রঙে রঙ্গীন হতে- প্রিয় নবীজি স.-এর পদাঙ্ক অনুসরণে;সেখানেই জীবনের সৌরভ ও সৌন্দর্য খুঁজতে। ইবাদাতের ঋতুরাজ আমায় বার বার যেন বলছে- কী পেলে, কী নিলে এ পবিত্র আবহে, তোমার জীবনের সৌন্দর্য আর সুরভীকে একটু খুঁজে দেখবে কী? তুমি ফুলের কাছে যা কামনা করো, ভ্রমরের গুঞ্জনে যে সূর খুঁজে ফেরো, বাতাসের মৃদ-মন্দ বয়ে চলায় যে প্রশান্তিবোধ করো- তোমার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-স্বজনরা কি তোমার কাছে তা পাচ্ছে? চিন্তা করো, মানুষ হিসেবে ভেতরে বাইরের পবিত্রতা, সৌন্দর্য আর সৌরভহীনতা তোমাকে কেমন জীবন দিয়েছে? সময় এসেছে ভাববার। তাই, আত্মোন্নয়নের জন্য নিজের অবস্থানটা জানা জরুরি নয় কি?

আমাদের সমাজে সুম্মুখে, বক্তৃতামঞ্চ বা সভায়, স্বল্প বা অপরিচিত পরিসরে প্রশংসিত হওয়ায় নিজের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার সুযোগ খুবই কম থাকে। বস্তুত জীবনের সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে পরিবারের সদস্য, নিকটজন, বন্ধু-স্বজন, প্রতিবেশি, অধীনস্ত লোকদের একান্ত মূল্যায়ন খুবই মূল্যবান। বিশেষ করে আমাদের সামাজিক আচরণ ও আর্থিক লেন-দেনের বিষয়টি চরিত্রের ব্যারোমিটার হিসেবে কাজ করে।

রমাদানে সিয়ামের কারণে স্যার বা বসের মেজাজ যদি বিগড়ে যায়, ম্যাডাম বা খালাম্মার প্রতি বাসার সহযোগী মানুষগুলোর ভয় যদি বেড়ে যায়, ন্যায়সঙ্গতভাবে আমার অনুপস্থিতি যদি অধীনস্তদের কাম্য হয়, দায়গ্রস্ত মানুষেরা আমার-আপনার সাথে আলাপের জন্য ইফতারের পরের সময়টি বেছে নিতে স্বচ্ছন্দবোধ করে- তাহলে একটু ভেবে দেখুন, মেজাজের ভারসাম্য রক্ষায় সিয়ামের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি কিনা? কুরআন মাজীদ সর্বোত্তম চরিত্রমাধুরীর অধিকারী এবং মানবতার রোলমডেলকেও সাবধান বাণী শুনিয়েছে এভাব- ‘তোমার চারপাশে কাউকেই পেতে না, যদি তুমি কঠিন হৃদয়ের অধিকারী হতে’।

হায়! আমাদের কী হলো? সিয়ামের মতো বিধান বছরের পর বছর পালন করেও মেকী ব্যক্তিত্ব আর কৌলিণ্য রক্ষায় জীবনের সকল সৌন্দর্য ও সৌরভকে পদদলিত করছি। আমাদের এমন জীবন যে, চিরসুন্দরের স্রষ্টার কাছে কত অপছন্দের, মৃত্যুর পর জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়ারও যে অনুপোযুক্ত (!) তা যদি একটি বার জানতাম!!! (চলবে)

লেখক: ড. মীর মনজুর মাহমুদ