করোনা কালের গপ্প

করোনা কালের গপ্প

ফাইল ছবি

বাইরের জেলা থেকে আগত এক রোগী ঢাকার এক হাসপাতালে মৃত্যুবরন করলেন। করোনা আতংকে কিংবা যে কোন কারনে তার সাথে থাকা সঙ্গীকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পড়লো মহা বিপদে। মৃতের নাম ঠিকানা সবই আছে, ফলে বেওয়ারিশও ঘোষনা করা যাচ্ছে না। উপায়ান্তর না দেখে তারা পুলিশে খবর দিলো। পুলিশ মানবিক দায়িত্বের অংশ হিসা্বে মৃতদেহ তার বাড়ীর ঠিকানায় পাঠানোর উদ্যোগ নিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মৃতদেহটা কফিনে ভরে একটা মিনি ট্রাক ভাড়া করে সংশ্লিষ্ট থানার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলো।

সন্ধ্যা নাগাদ গাড়ী রওনা দিলো। যাত্রী সাকুল্যে তিন জন। ড্রাইভার আর হেলপার কেবিনে, মৃত ব্যাক্তি কফিনে। রাত দশটা নাগাদ গাড়ী হাইওয়ের পার্শ্ববর্তী এক বাজারে পৌঁছালে ড্রাইভার আর হেলপার নাস্তা-পানি খাওয়ার জন্য গাড়ী থামালো। একে তো রাত হয়েছে, তার উপরে লকডাউনে হোটেল খোলা পাওয়া মুশকিল। তারা একটু ভিতরের দিকে গিয়ে একটা হোটেল খোলা পেয়ে সেখানেই ঢুকলো।

এদিকে এক যুবকের বাড়ী যাওয়া খুব জরুরী। লকডাউনের মধ্যে সে ঢাকা থেকে বহু কষ্টে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে এই বাজার পর্যন্ত আসতে পেরেছে। কিন্তু এরপর আর কোন কিছুই না পেয়ে অন্ধকারে এক বন্ধ দোকানের ছাউনির নীচে চাদর মুড়ি দিয়ে বিষন্ন মনে চুপচাপ বসে আছে। একটা মিনি ট্রাক এসে রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই মনটা তার খুশীতে ভরে উঠলো, যাক এই গাড়ীটাতে করে যদি অন্তত কিছুদুর যাওয়া যায়, তাতে মন্দ কি! আর যদি তার এলাকা পর্যন্ত যাওয়া যায় তাহলে তো কোন কথাই নেই। আচ্ছা, যদি ড্রাইভার তাকে নিতে রাজী না হয়? তার মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেল...। খাওয়া দাওয়া শেষে ড্রাইভার আর হেলপার ফিরে এসে যেই না গাড়ী স্টার্ট দিলো, লোকটাও অতি সন্তর্পনে ট্রাকের পিছনে উঠে গেল। একটা বড় কাঠের বাক্সের মত পেয়ে ভাবলো, যাক, একটু আরাম করে বসে যাওয়া যাবে। হু হু বাতাস, চলন্ত গাড়ী, ঠান্ডা লেগে যেতে পারে বিধায় চাদরটা ভালো করে মুড়ি দিয়ে বাক্সের উপর আরাম করে বসলো।

গাড়ী চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষন পর হেলপার কেবিনের ছোট্ট জানালা দিয়ে পিছনে তাকালো কফিনের পজিশন ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য। অন্ধকারে আবছা আবছা যা দেখলো, তাতে তার সমস্ত শরীর যেন হিম হয়ে এলো!

ড্রাইভারকে খামচে ধরে, "ওস্তাদ, গাড়ী থামান"!

"ক্যান? কি অইসে?"

"ওস্তাদ! মুর্দায় তো বাক্স থেইক্যা বাইর অইয়া পড়সে"!!!

"ধুর পাগল! কি কস এইসব?" ড্রাইভার মহা বিরক্ত;

"ঠিকই কইছি ওস্তাদ, বিশ্বাস না হয় চাইয়া দ্যাহেন, মুর্দায় বাক্সের উফরে চাদর মুড়ি দিয়া বইসা বিড়ি টানতাসে"!

ড্রাইভার এবার আর না হেসে পারলো না; তারপরও কৌতুহলবশত গাড়ী দাঁড় করিয়ে কেবিনের জানালা দিয়ে পিছনে তাকালো, তখনই বিড়ির গন্ধের সাথে গুনগুন সুরে গানও ভেসে এলো, "ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী....!, কপাল দোষে হারাইলাম সবই......!!!"

ড্রাইভারের শিরদাঁড়া বেয়ে কেমন যেন একটা হিমশীতল স্রোতধারা নেমে এলো। শরীরও কেমন যেন অবশ হয়ে আসতে লাগলো। কোন রকম মাথা ঠিক রেখে গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ করে দুজনেই নেমে এলো; কাঁপা কাঁপা পায়ে গাড়ীর পিছনের দিকে এগিয়ে গেলো।

"কিরে ভাই! গাড়ী থামাইলা ক্যান! কোন সমস্যা?" কিছুটা ভীত এবং বিব্রত হয়ে লোকটা শুধালো। এর পর সে শুধু শুনতে পেলো, "চল পলাই!", দেখলো ড্রাইভার আর হেলপার উর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সে ভাবলো, ঘটনাটা কি?! এরা এইভাবে দৌড়ানো শুরু করলো কেন? বড় কোন বিপদ ঘটলো নাকি! তাই যদি হয় তাহলে এই নির্জন রাতে সেই বা এখানে একা কি করে থাকবে! তাহলে তো ওদের সাথে যাওয়াই তো নিরাপদ৷ এই ভেবে সেও লাফ দিয়ে গাড়ী থেকে নেমে ওদের পিছন পিছন দৌড়াতে শুরু করলো।

হেলপার দৌড়ের মাঝেই এক ঝলক পিছন ফিরে দেখে,

"ওস্তাদ, মুর্দায় তো পিছে পিছে আইতাছে"!

"কস কি!! এই দৌড়ে কাম অইবোনা রে! আরো জোরে.............!!!

(সংগৃহীত)