নবীজির ওপর দরুদ পাঠের যত ফজিলত

নবীজির ওপর দরুদ পাঠের যত ফজিলত

প্রতিকী ছবি

দরুদ শব্দটি কোরআন-হাদিসে নেই। এটি ফারসি শব্দ। তবে কোরআন-হাদিসে এর প্রতিশব্দ ও পরিভাষা হলো ‘আস-সালাতু ওয়াস সালামু আলান্নাবিয়্যি।’ অর্থাৎ নবী (সা.)-এর প্রতি সালাত ও সালাম।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম শুনলে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করতে হয়। নবী (সা.)-এর প্রতি অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দাবি হলো তাঁর প্রতি দরুদ পড়া। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো, প্রথমবার নবীজির নাম শুনে দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। এরপর প্রতিবার পাঠ করা মুস্তাহাব।

কোরআনে দরুদ ও সালামের প্রসঙ্গ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়েন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ফেরেশতারা। তাই অনুরূপ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বনি আদমকেও। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদাররা, তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো; এবং বেশি পরিমাণে সালাম পাঠ করো।

(সুরা আহজাব, হাদিস : ৫৬)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দরুদ পাঠের ভাবার্থ হলো, আল্লাহ তাআলা তাঁর ফেরেশতাদের সামনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা করেন। আর ফেরেশতাদের দরুদ পাঠের ভাবার্থ হলো, তাঁরা নবী (সা.)-এর জন্য বরকতের দোয়া করেন। (ফাতহুল বারি : ৮/৩৯২)

সংক্ষিপ্ত আকারে অল্প সময়ে পাঠ করা যায় এমন একটি দরুদ হলো—‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ এটা পড়তে খুব বেশি সময় লাগে না। আবার কোনো কাজ বন্ধ করেও তা পড়তে হয় না।

তাই যত বেশি সম্ভব দরুদ পাঠ করা চাই। আর সর্বোত্তম দরুদ হলো, দরুদে ইবরাহিম, যা নামাজ শেষে পাঠ করা হয়।
দরুদ পাঠ আল্লাহর রহমত লাভের উপায়

একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা ১০টি রহমত নাজিল করেন। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ১০টি রহমত বর্ষণ করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৪৮৫)

দরুদ পাঠে গুনাহ মাফ হয়

আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন, তাঁর ১০টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য ১০টি মর্যাদা উন্নীত করা হবে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১২৯৭)

দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতাদের দোয়া

দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। আমির বিন রাবিআহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে এবং যতক্ষণ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। অতএব, বান্দা চাইলে তার পরিমাণ (দরুদ পাঠ) কমাতেও পারে বা বাড়াতেও পারে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯০৭)

দরুদ পাঠ না করায় অভিসম্পাত

যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর নাম শুনে দরুদ পাঠ করল না; তার প্রতি আল্লাহর রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবী (সা.) মিম্বরে ওঠার সময় তিনবার আমিন বলেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি মিম্বরে উঠলেন আর বললেন, আমিন-আমিন-আমিন। তিনি বলেন, জিবরাইল আমার কাছে এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন আমিন। আমি বললাম, আমিন। যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় তার মা-বাবা কিংবা তাদের একজনকে পেল, আর তাদের সেবাযত্ন করল না; এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করল। সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ তাআলাও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন; আমি বললাম, আমিন। আর যার কাছে আপনার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করল না; অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন। আমি আমিন বললাম। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৯০৭)