দু-তিন দিনে দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে আলু আমদানি

দু-তিন দিনে দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে আলু আমদানি

ফাইল ছবি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, আমরা দেখছি, দু-তিন দিনের মধ্যে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে আমদানি করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিব এখন বিদেশে। গতকাল রাতেও (রোববার) মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজারে বাড়তে থাকা দামের লাগাম টানতে আলুসহ পেঁয়াজ ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। এর প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও খুচরা বাজারে সে দাম কার্যকর হয়নি। ওই সময় খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ও হিমাগার পর্যায়ে দাম নির্ধারণ না হওয়ার কারণে খুচরায় দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না বলে অজুহাত দেখান। এরপর পাইকারি ও হিমাগার থেকে পাকা রসিদের মাধ্যমে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশনাও দেয়া হয়। তাতেও দাম কমেনি। ওই সময় ‘বিক্ষুব্ধ’ হয়ে কয়েকদিন হিমাগার থেকে আলু বিক্রিও বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে আলুর দাম বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কম। ভারতের কমোডিটি অনলাইনের তথ্যে, বর্তমানে ভারতে প্রতি কেজি আলুর গড় দাম ১৪ দশমিক ৯৭ রুপি, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রতি কেজি ২০ টাকারও কম (১৯ টাকা ৮৫ পয়সা), যা পরিবহন খরচসহ ২৫ টাকার মধ্যে বাজারজাত করা সম্ভব। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দামের অর্ধেক।

এদিকে ভারত বিশ্বের শীর্ষ দ্বিতীয় আলু রফতানিকারক দেশ। এ দেশে গত বছর ৪ কোটি ৯৭ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। যারমধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টন আলু রফতানি হয়েছে। তবে, আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ষষ্ঠ। গত ৫০ বছরে আলু উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ। এবছর দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৯০ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২০ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। আর বাড়তি উৎপাদনের কারণে এর আগে কখনো আলু আমদানির প্রয়োজন হয়নি। বরং কিছু আলু রফতানি হচ্ছে।

আলু আমদানির সিদ্ধান্ত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর হবে মন্তব্য করে আলু রফতানিকারক সমিতির সভাপতি ও ফেরদৌস বায়োটেকের এমডি ফেরদৌসী বেগম বলেন, আলু আমদানির সিদ্ধান্ত ‘মাথাব্যথার কারণে মাথাই কেটে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত’ হবে। এতে দেশে এখনো অবিক্রীত ২০ লাখ টন আলু পচে যাবে। ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি হবে। বাড়তি আলু কোথায় যাবে?

আলু থাকলেও দাম নিয়ন্ত্রণে কেন আসছে না এমন প্রশ্নের জবাবে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখানে কিছু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট রয়েছে। সেটা চিহ্নিত হোক। সেজন্য সব ব্যবসায়ীর ক্ষতি করা উচিত হবে না। সরকারের উচিত হিমাগার থেকে নির্ধারিত দামে আলু ছাড়ের ব্যবস্থা করা। সেটা তারা করতে পারছে না। ব্যর্থ হয়ে এখন আমদানি করতে চাচ্ছে। এটা অসৎ উদ্দেশ্য।’

সরকারের কয়েকটি সংস্থা দাবি করছে, চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। চাষিরা এ আলু বাজারে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৩ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছেন। পাইকারি পর্যায়ে আলুর দাম সব খরচ মিলে কোনোভাবে ২৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়, যা খুচরায় এসে সর্বোচ্চ ৩২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ার কথা। এখনো দেশের ৩৬৫টি হিমাগারে ২০ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা রয়েছে। কৃষকের হাতের আলু শেষ হওয়ার পর জুন থেকে হিমাগারের আলু বাজারে সরবরাহ আসতে থাকে। কিন্তু এ সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না। কৃত্রিমভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আলুর দাম বাড়াচ্ছেন। এর মধ্যে হিমাগার মালিকরা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়ছেন। ফলে কৃত্রিম সংকটের দিকে যাচ্ছে এ বাজার।