পিয়াজ চাষে বাড়লো দু’টি মৌসুম, সংকট কাটাতে নানা প্রচেষ্টা

পিয়াজ চাষে বাড়লো দু’টি মৌসুম, সংকট কাটাতে নানা প্রচেষ্টা

সংগৃহীত

একদিকে প্রণোদনার মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন পিয়াজ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশিয় পদ্ধতিতে পিয়াজ সংরক্ষণের মাঁচা ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। প্রশিক্ষণ ও সভার আয়োজন এবং বাজার তদারকি করা হচ্ছে যাতে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা বেশি লাভ নিয়ে যেতে না পারে। পিয়াজের সংকট কাটাতে কুষ্টিয়ায় এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

বছরে দু’টির জায়গায় পিয়াজ চাষের চারটি মৌসুম সৃষ্টি করায় সারাবছরই পিয়াজ উঠতে থাকছে, বাড়ছে উৎপাদন। এতে সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। 

কৃষি বিভাগের হিসাবে-দেশে এখন পিয়াজের চাহিদা বছরে ২৮ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আর দেশে উৎপাদন ৩৪ লাখ মেট্রিক টনের মতো। তবে ঠিকমতো সংরক্ষণের অভাবে নষ্টই হচ্ছে ১০ লাখ মোট্রিক টনের বেশি। সে কারণে পিয়াজ আমদানি করতে হয়। বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা হলেও এবছর এরই মধ্যে ১৬ লাখ মেট্রিক টন আমদানি হয়ে গেছে। এই হিসাব মতে, দেশে পিয়াজের চাহিদা বাড়ছে। এসব চিন্তা করে সংকট মোকাবেলায় পিয়াজের চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  

সারাদেশে যে পাঁচটি জেলায় পিয়াজ চাষ বেশি হয় তার একটি কুষ্টিয়া। সবশেষ শীতকালীন মৌসুমে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে এখানে ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন পিয়াজ উৎপাদন হয়েছে। 

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে যেখানে বছরে দু’বার পিয়াজ চাষ হতো এখন সেখানে ৪ বার চাষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রণোদনা ও লাভ পেয়ে দিন দিন কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন পিয়াজ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। 

তিনি বলেন, মুড়িকাটা (ছোট পিয়াজ থেকে পিয়াজ) পিয়াজ ঘরে ওঠে ডিসেম্বর জানুয়ারিতে। আর শীতকালীন (দানা থেকে চারা) পিয়াজ ওঠে মার্চে। এই দুটি মৌসুমেই আগে পিয়াজ উৎপাদন করতো কৃষকরা। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে গ্রীষ্মাকালীন পিয়াজ। এর জন্য আনা হয়েছে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতও। দুই দফায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে এই মৌসুম। প্রথম দফায় কুষ্টিয়া জেলায় ১ হাজার ২০০ জন কৃষককে ১ বিঘা জমির জন্য ১ কেজি বীজ, ৪০ কেজি সার ও খরচ বাবদ ২ হাজার ৮০০ করে টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এই পিয়াজ এখন উঠতে শুরু করেছে। অক্টোবর মাস জুড়েই এটি ঘরে উঠবে। গ্রীষ্মকালীন অন্য মৌসুম চাষ শুরু হচ্ছে অক্টোবরে। এ সময়েও একই সংখ্যক কৃষককে একই রকমের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এই পিয়াজ উঠবে আগামী ডিসেম্বরে মুড়িকাটা পিয়াজের আগে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলায় নতুন দুই মৌসুমে এবার পিয়াজ চাষ অনেক সম্প্রসারণ হয়েছে। সারাবছর পিয়াজ ওঠায় কৃষকরা ভালো দাম পাবেন। আর ঘাটতি মেটাবে জাতীয় চাহিদার। তিনি আশা করেন গ্রীষ্মকালীন পিয়াজে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, পিয়াজের সব সংকট কেটে যাবে।

এ পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত পিয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াচ্ছে পিয়াজের পঁচন ঠেকানো। তাই দেশিয় পদ্ধতিতে পিয়াজ সংরক্ষণের মাঁচা ঘর নির্মাণ করছে সরকার। 

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলাতে ১৫ জন কৃষকের বাড়িতে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করে মাঁচা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তিন স্তরের একেকটি মাঁচা ঘরে আড়াইশ থেকে তিনশ মণ করে পিয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা যাবে। ইতোমধ্যেই এসব ঘরের পিলার পর্যন্ত হয়ে গেছে। এখন অ্যাংগেল ও টিন বসানোর কাজ চলছে। 

কুমারখালীর ছাতিয়ান গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, মাঁচা ঘরে পিয়াজ রাখতে পারলে আর পঁচার টেনশন থাকবে না। যখন ভাল দাম পাব তখন বেঁচতে পারব।  

কুষ্টিয়া জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব ঘর কৃষকদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা গেলে যে পিয়াজ নষ্ট হতো তা বাঁচিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। মোকাবিলা করা যাবে পিয়াজ বাজারের অস্থিরতাও। প্রথম পর্যায়ে এসব ঘরে সফলতা আসলে পর্যায়ক্রমে আরো ঘর তৈরি করা হবে। 

তিনি বলেন, এসব ঘরে থাকা রেজিস্টারের মাধ্যমে সরকার পিয়াজের মজুদ সম্পর্কেও ধারণা পাবে। 

এদিকে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাঁচা ঘরে পিয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ এবং বিপণন নিয়ে দিনব্যাপী কৃষি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষন কর্মশালা হয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে

প্রকল্প পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন নিজে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলার চাষী, ব্যবসায়ী, কৃষি উদ্যোক্তা মিলে মোট ৬০ জন এতে অংশ গ্ৰহণ করেন। আর গত ৩ অক্টোবর জেলা কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ সমন্বয় কমিটির সভায়ও পিয়াজ চাষ বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়।