কোভিড -১৯ এবং শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন ” -মোসাম্মৎ আয়েশা আক্তার

কোভিড -১৯ এবং শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন ” -মোসাম্মৎ আয়েশা আক্তার

ফাইল ছবি

 “কোভিড -১৯” প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে শুরু হওয়ার প্রারম্ভে “কোভিড-১৯ এবং মুক্তিযুদ্ধ” শিরোনামে লিখেছিলাম ।লেখার উদ্দেশ্য ছিল “কোভিড -১৯” এর বিস্তারকে রুখতে হলে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য বীর অগ্রজদের যে উচ্চ পর্যায়ের ত্যাগের শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের শক্তি ও চেতনা ছিল, সে রকম সম্মোহনী মানসিক শক্তির প্রয়োজন এখন আমাদের।যা হোক, তখনও বুঝতে পারি নি “কোভিড -১৯” বিশ্বকে সবক্ষেত্রে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে আমুলভাবে। অর্থনীতির শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতির উপর যে সুবৃস্তিত প্রভাব বিস্তার করবে,তা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরছিলাম।

কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায়ও যে আমুল পরিবর্তন আসবে, তা এতোটা উপলব্ধি করতে পারি নি। শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের ধারক ও বাহক আমি নিজেও। করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন কালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হলে শিক্ষকের যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া জরুরী নয়, ঠিক তেমনি ক্লাসের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা জরুরী নয়। এ ক্ষেত্রে অন- লাইন ক্লাসই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।”অন- লাইন ক্লাস” কার্যকরী ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানকে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করতেই হবে।কারণ তিনি “রূপকল্প-২০২১” গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের। ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আজকে আমরা
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের দ্বার প্রান্তে অবস্থান করছি । তার সুফল হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে “কোভিড-১৯” এর বিরুদ্ধে সফলভাবে যুদ্ধ করার রসদ আমরা পেয়ে যাচ্ছি ঘরে বসে অন-লাইন ক্লাস ও অন- লাইনে অফিসের কার্যক্রম চালু রাখাসহ ইত্যাদির মাধ্যমে।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন- লাইন ক্লাস চালু করেছে।এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের শিক্ষা ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তথা সরকারি কলেজের সম্মানীয় শিক্ষক ও শ্রদ্ধাভাজন প্রশাসকবৃন্দের কর্মতৎপরতা চোখে পড়ার মতো।সাধুবাদ জানাই বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা ) ক্যাডারের এই নিবেদিত শ্রমকে। এখানে না বললেই নয়, অন- লাইন ক্লাসের সরকারি প্রজ্ঞাপন জারীর অনেক আগেই অর্থাৎ “কোভিড-১৯” এর বিস্তার রোধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকা কলেজের সুযোগ্য ও সম্মানীয় অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ স্যার উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য অন-লাইন লাইভ ক্লাস শুরু করেন অগ্রপথিক হিসেবে।এ জন্য স্যারকে আন্তরিক অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাই।পরবর্তী ধাপে তিনি সম্মান শ্রেণির বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য অন- লাইন ক্লাস চালু করেন। বর্তমানে ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ও সম্মান উভয় শ্রেণির জন্য অন-লাইন ক্লাস চালু রয়েছে।
আগামি দিনগুলোতে অন-লাইন ক্লাসেই শুধু ঢাকা কলেজ সীমাবদ্ধ থাকবে না, অন- লাইন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার কথা ভাবছে। আরো যোগ হতে পারে অন- লাইন ক্লাসের মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিকল্প ধারা প্রবর্তন।
এ লেখাটি লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য সম্মানীয় কলেজ শিক্ষকবৃন্দের অন- লাইন ক্লাস দেখার অভূতপূর্ব ভলোলাগার বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলেই চোখ আটকে যায় সম্মানীয় শিক্ষকবৃন্দের অন- লাইন ক্লাসে।এ ক্লাসগুলো যে শুধু সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাই করছে তা কিন্তু নয় ; অনেক শিক্ষক ও জ্ঞানপিপাসু মানুষ ক্লাসগুলো থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করে নিচ্ছেন।
আর প্রত্যেকটি অন-লাইন ক্লাস রেকর্ডিং এ শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ, শব্দহীন ক্লাস রেকর্ডের দূরহ কাজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকবৃন্দের মেধা ও শ্রম ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যদের অবদান অনস্বীকার্য।

সবশেষে এটাই বলা, “কোভিড-১৯” আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দক্ষতার দিক

দিয়ে এক ভিন্নরকম ইতিবাচক মাত্রা যোগ করে বাংলাদেশের শিক্ষার গুণগত মানের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।শত বাঁধা পেরিয়ে সকল শিক্ষার্থীর মাঝে অন-লাইন শিক্ষার আলো পৌঁছে যাবে - এই প্রত্যাশায়।


মোসাম্মৎ আয়েশা আক্তার,
সহকারী অধ্যাপক,
অর্থনীতি বিভাগ,
ঢাকা কলেজ, ঢাকা