সমলিঙ্গ সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

সমলিঙ্গ সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

প্রতিকী ছবি

ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এর মাধ্যমে সমলিঙ্গে সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। সমলিঙ্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাতে কোনো বৈষম্য না হয়, সে বিষয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তবে সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিলেও বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আদালতের নেই বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।

রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, আইনের পরিবর্তন করার কাজটি পার্লেমেন্টের হাতে। আইন পরিবর্তনের কাজ আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। তবে সমলিঙ্গের মানুষ যাতে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সে দিকে নজর রাখা জরুরি। খবর ডয়চে ভেলের

এ বিষয়ে বলতে গিয়ে বিচারপতি বলেন, বিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোনো অনঢ় বিষয় নিয়। এর বিবর্তন হয়েছে ঐতিহাসিক সময় ধরেই। ফলে এ বিষয়ে আলোচনার সময় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। 

এ বিষয়ে আইনের দিকটি দেখার জন্য একটি কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সমলিঙ্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাতে কোনো বৈষম্য না হয়, সে বিষয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। সেখানে বলা হয়েছে, সমলিঙ্গের কোনো যুগলকে থানায় ডেকে বা বাড়িতে গিয়ে হেনস্থা করতে পারবে না পুলিশ। তাদের লিঙ্গ বিষয়ক কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, সমলিঙ্গের যুগল যাতে স্বাধীনভাবে থাকতে পারেন, তাদের বাড়ি পেতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাষ্ট্র ব্যক্তিকে যে যে অধিকার দেয়, সমলিঙ্গের মানুষদেরও সেই সেই অধিকার পাওয়ার প্রাপ্য। এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। সেই অধিকার রক্ষা করতে হবে রাষ্ট্রকে।

পার্লামেন্টের একটি বিশেষ কমিটি এর আইনি দিকগুলো বিচার করবে। সেই কমিটিতে কারা থাকবেন, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

দশ দিন ধরে আদালত সমলিঙ্গের বিয়ে সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুনেছে। এ বিষয়ে ভারতের সব রাজ্যে যে মামলাগুলো উঠেছিল, সেই সবকটি মামলার একত্র শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও এই মামলায় ছিল বেশ কয়েকটি রাজ্য। এর মধ্যে আসাম, রাজস্থান এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার এর বিরোধিতা করেছে।

ভারত সরকার আদালতকে জানিয়েছে, ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেখানে দুই বিষম লিঙ্গের ব্যক্তির মধ্যেই বৈধ প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এটাই সামাজিক বিধি।

রায় পড়ার সময় এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি বলেছেন, বিয়ে কোনো অনঢ় প্রতিষ্ঠন নয়। এর বিবর্তন হয়। অতীতেও হয়েছে। সমলিঙ্গের সম্পর্ক সামাজিক সম্পর্ক। একেও একইরকম গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমলিঙ্গের অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি।

ভারতে বিয়ে সংক্রান্ত যে আইন আছে, তা পরিবর্তন করার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই। ফলে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে পরিবর্তন ঘটিয়ে সেখানে সমলিঙ্গের বিয়েকে স্বীকৃতি দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ারের মধ্যে নেই বলে জানিয়েছেন তারা। 

ফলে সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি বৈধতা দেওয়ার যে মামলা হয়েছিল, আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করল না। পার্লামেন্টই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। উল্লেখ্য, ভারতে বিয়ে সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আইন আছে। এর মধ্যে হিন্দু, ক্রিস্টান, মুসলিম, পার্সি আইন যেমন আছে তেমনই আছে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট। ভিন ধর্মের বিয়ের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য। জাত, ধর্মের ক্ষেত্রে সমানাধিকারের কথা যেখানে বলা হয়েছে। সেই আইনেই পরিবর্তন এনে সমলিঙ্গের বিয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছিল এই মামলায়। সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পার্লামেন্টের দিকে ঠেলে দিয়েছে।