রকস্টারের চলে যাওয়ার ৫ বছর

রকস্টারের চলে যাওয়ার ৫ বছর

ছবিঃ সংগৃহীত।

বাংলাদেশের রক সঙ্গীতাকাশে উজ্জ্বল এক ধ্রুব তারার নাম আইয়ুব বাচ্চু। 

বহুমাত্রিক প্রতিভার এই রকস্টারকে বলা হয় দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের মধ্যমণি। লিড গিটারে বাংলাদেশে তো বটেই, উপমহাদেশেও আইয়ুব বাচ্চু অতুলনীয় হয়ে আছেন। সেই কীর্তি তার গায়কিকেও ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আজকের সময়ে গিটারের জনপ্রিয়তার মূলে তিনি।

 

ব্যান্ডশিল্পী বলতে এক সময় মানুষের যে দৃষ্টিকটু চাহনি ছিল, সেটা অনেকটাই পাল্টে দিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড, সলো, ডুয়েট, মিক্সড এমনকি প্লে-ব্যাকে গান গেয়ে তিনি পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার চূড়ান্ত শীর্ষে।

গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চু তার গানের মতো করেই রুপালি গিটার ফেলে চলে গেছেন দূরে, বহুদূরে। ২০১৮ সালের এই দিনে (১৮ আগস্ট) সঙ্গীতাঙ্গনকে স্তব্ধ করে, কোটি কোটি ভক্তÑঅনুরাগীকে বিস্ময়ে ভাসিয়ে আকস্মিকভাবে পাড়ি জমান সেই দূর বহুদূরের দেশে। কিন্তু একজন সত্যিকারের তারকার কোনো মৃত্যু হয় না। চলো বদলে যাই, ফেরারি মন, এই রুপালি গিটার, বাংলাদেশ, হাসতে দ্যাখো, এখন অনেক রাত, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, আসলে কেউ সুখী নয়, একদিন ঘুম ভাঙা শহরে, উড়াল দেব আকাশে, গতকাল রাতে, একচালা টিনের ঘর, তুমি প্রেম, রাত জাগা পাখি হয়ে, আম্মাজান, অনন্ত প্রেমÑ এ রকম শত শত জনপ্রিয় গানের নায়ক আইয়ুব বাচ্চু। এখনো তার গান শুনলে ভক্তরা আগের মতোই উন্মাদনায় মাতেন। আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড সঙ্গীতে নির্দিষ্ট একটি ঘরানায় আবদ্ধ থাকেননি। আজম খানের মতো ‘পপসম্রাট’ বা জেমসের মতো ‘গুরু’ উপাধি পাওয়া হয়নি বটে তার, তবে অবিসংবাদিতভাবে তিনিই ছিলেন ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রাণপুরুষ।

তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারবাদক, গীতিকার, সুরকার। এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড গিটারবাদক এবং প্রধান ভোকাল বাচ্চু ছিলেন বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত জগতের জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বয়সি অনেক ব্যান্ড তারকারই কণ্ঠ ভাঙতে শুরু করলেও ব্যতিক্রম ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। জীবনের শেষ পর্যন্ত কণ্ঠ-আর সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের উন্মাতাল করে রাখার ক্ষমতা ছিল তার। একক, ব্যান্ড, প্লে-ব্যাক- যেখানেই তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন, সেখান থেকেই সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। বিশেষ করে প্লে-ব্যাকে আম্মাজান, অনন্ত প্রেম, সাগরিকা গানের সুবাদে প্রতিটি গ্রামের শ্রোতাদের কাছে খুব দ্রুত আলোড়ন ছড়ান আইয়ুব বাচ্চু। পাশাপাশি ব্যান্ডের বাইরে একক অ্যালবামের মাধ্যমেও মফস্বল শ্রোতাদের মন কাড়েন তিনি।

জাতীয়সারাদেশরাজনীতিআন্তর্জাতিকখেলাধুলাঅর্থনীতিবিনোদনতথ্য প্রযুক্তিইসলাম ও ধর্মশেয়ারশিল্প ও সাহিত্যস্বাস্থ্য

 

  মাহমুদ আব্বাস বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করলেন জন্মদিনে শেখ রাসেলের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা অবরুদ্ধ গাজায় হাসপাতালে ইসরাইলী বোমা হামলা : নিহত ৫০০ মালদ্বীপকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ আরও ৯ মৃত্যু ডেঙ্গুতে , হাসপাতালে ২৬০৯

/

বিনোদন

 

রকস্টারের চলে যাওয়ার ৫ বছর

জাহাঙ্গীর বিপ্লব

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০২

 

facebook sharing buttonmessenger sharing buttonwhatsapp sharing buttontwitter sharing buttonsharethis sharing button

 

বাংলাদেশের রক সঙ্গীতাকাশে উজ্জ্বল এক ধ্রুব তারার নাম আইয়ুব বাচ্চু। বহুমাত্রিক প্রতিভার এই রকস্টারকে বলা হয় দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের মধ্যমণি। লিড গিটারে বাংলাদেশে তো বটেই, উপমহাদেশেও আইয়ুব বাচ্চু অতুলনীয় হয়ে আছেন। সেই কীর্তি তার গায়কিকেও ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আজকের সময়ে গিটারের জনপ্রিয়তার মূলে তিনি।

 

ব্যান্ডশিল্পী বলতে এক সময় মানুষের যে দৃষ্টিকটু চাহনি ছিল, সেটা অনেকটাই পাল্টে দিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড, সলো, ডুয়েট, মিক্সড এমনকি প্লে-ব্যাকে গান গেয়ে তিনি পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার চূড়ান্ত শীর্ষে।

 

 

গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চু তার গানের মতো করেই রুপালি গিটার ফেলে চলে গেছেন দূরে, বহুদূরে। ২০১৮ সালের এই দিনে (১৮ আগস্ট) সঙ্গীতাঙ্গনকে স্তব্ধ করে, কোটি কোটি ভক্তÑঅনুরাগীকে বিস্ময়ে ভাসিয়ে আকস্মিকভাবে পাড়ি জমান সেই দূর বহুদূরের দেশে। কিন্তু একজন সত্যিকারের তারকার কোনো মৃত্যু হয় না। চলো বদলে যাই, ফেরারি মন, এই রুপালি গিটার, বাংলাদেশ, হাসতে দ্যাখো, এখন অনেক রাত, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, আসলে কেউ সুখী নয়, একদিন ঘুম ভাঙা শহরে, উড়াল দেব আকাশে, গতকাল রাতে, একচালা টিনের ঘর, তুমি প্রেম, রাত জাগা পাখি হয়ে, আম্মাজান, অনন্ত প্রেমÑ এ রকম শত শত জনপ্রিয় গানের নায়ক আইয়ুব বাচ্চু। এখনো তার গান শুনলে ভক্তরা আগের মতোই উন্মাদনায় মাতেন। আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড সঙ্গীতে নির্দিষ্ট একটি ঘরানায় আবদ্ধ থাকেননি। আজম খানের মতো ‘পপসম্রাট’ বা জেমসের মতো ‘গুরু’ উপাধি পাওয়া হয়নি বটে তার, তবে অবিসংবাদিতভাবে তিনিই ছিলেন ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রাণপুরুষ।

 

 

তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারবাদক, গীতিকার, সুরকার। এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড গিটারবাদক এবং প্রধান ভোকাল বাচ্চু ছিলেন বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত জগতের জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বয়সি অনেক ব্যান্ড তারকারই কণ্ঠ ভাঙতে শুরু করলেও ব্যতিক্রম ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। জীবনের শেষ পর্যন্ত কণ্ঠ-আর সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের উন্মাতাল করে রাখার ক্ষমতা ছিল তার। একক, ব্যান্ড, প্লে-ব্যাক- যেখানেই তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন, সেখান থেকেই সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। বিশেষ করে প্লে-ব্যাকে আম্মাজান, অনন্ত প্রেম, সাগরিকা গানের সুবাদে প্রতিটি গ্রামের শ্রোতাদের কাছে খুব দ্রুত আলোড়ন ছড়ান আইয়ুব বাচ্চু। পাশাপাশি ব্যান্ডের বাইরে একক অ্যালবামের মাধ্যমেও মফস্বল শ্রোতাদের মন কাড়েন তিনি।

 

 

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর ব্যান্ডের ভেতরে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ায় এলআরবি’র ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডটির নতুন শিল্পী হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন বালাম। তবে এ নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার এবং ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা এলআরবির নাম ব্যবহার করে গান গাইতে পারবে না। এমন অবস্থায় এলআরবি ছেড়ে বালাম গঠন করেন নতুন ব্যান্ড ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’।

 

এ ধরনের একের পর এক ঘটনার পর শ্রোতাদের মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে এলআরবি ব্যান্ডও চিরবিদায় নিচ্ছে? এরকম জনপ্রিয় ব্যান্ডটির টিকে থাকা নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা যেন কিছুতেই মানতে পারেননি ভক্তরা। এজন্য আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারকেও ভক্তদের রোষানলে পড়তে হয়েছিল। বালামকে নিয়ে ‘এলআরবি’ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তে আবার ব্যান্ড সদস্যদের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিতে শুরু করে। মতের অমিল হওয়ায় ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়ান গিটারিস্ট আবদুল্লাহ আল মাসুদ এবং ম্যানেজার শামীম আহমেদ। এরপর ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বেইজ গিটারিস্ট স্বপন পরে ড্রামার রোমেলকে নিয়ে ‘এলআরবি’র নতুন লাইনআপ সাজানোর চেষ্টা করেন। সেটাও বেশিদূর এগোয়নি।

আইয়ুব বাচ্চু তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি নামেও পরিচিত। তার ডাক নাম রবিন। ‘এবি কিচেন’ নামে তার একটি নিজস্ব স্টুডিও রয়েছে। মূলত রক ধাঁচের কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক, ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীত এবং লোকগীতি গেয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধতায় ভাসিয়েছেন ‘এবি’। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া আইয়ুব বাচ্চুর ছেলেবেলায় গান শুনতে শুনতে নিজে চেষ্টা করতে গিয়েই তার গায়ক হয়ে ওঠা। পশ্চিমা সঙ্গীতের প্রেমে পড়ে হাত দেন গিটারে। জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুরের মতো শিল্পীদের কাজ থেকে পেয়েছেন অনুপ্রেরণা।

 

সত্তরের দশকে গিটার বাজাতে শুরু করেন বাচ্চু এবং খুব দ্রুত গিটারে দক্ষ হয়ে ওঠেন। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে বাচ্চু গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ডদল। শুরুতে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নাম দিলেও পরে বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে চলত তাদের পরিবেশনা। এরপর ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার সঙ্গীত জীবনের যাত্রা শুরু করেন। সে সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পারফর্ম করতেন তিনি। তার কণ্ঠ দেওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’।

 

গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গি। পরে তিনি সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৮০ সালে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশ পাওয়া বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’ তেমন সাফল্য পায় না। ১৯৮৮ সালে বাচ্চুর দ্বিতীয় একক ‘ময়না’ প্রকাশ পায় এবং এই অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সঙ্গীত জগতে ব্যাপক সাড়া ফেলেন এবং অ্যালবামটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। টানা ১০ বছর সোলসের লিড গিটার বাজানোর পর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’। শুরুতে ‘এলআরবি’র পুরো নামটি ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, পরে তা বদলে নাম হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’। এর পরের গল্পটা অনেকেরই জানা। ব্যান্ডের পাশাপাশি একক অ্যালবাম ও সিনেমার গান গেয়ে দেশজুড়ে এক নামে পরিচিতি পান এই রকস্টার।