শীতকালীন সবজিতে সবুজ বরেন্দ্র অঞ্চল

শীতকালীন সবজিতে সবুজ বরেন্দ্র অঞ্চল

সংগৃহীত

এখনও পুরোপুরি শীতের আমেজ আসেনি। তবে ইতোমধ্যেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। শীতের আগমনে সবজি চাষে ব্যস্ত সময়ও পার করছেন কৃষকরা। বরেন্দ্র রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে শীতকালীন সবজিতে সবুজের সমারোহ।

কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সবজির আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। এছাড়া আগাম জাতের কিছু সবজি বাজারে আসায় ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে সার ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা থাকলে আরও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে জানিয়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা।

  রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, জেলায় গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এ বছরের (২০২৩-২৪) চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে সবজির চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপি চাষ হয়েছে ৩৮৭ হেক্টর, টমেটো চাষ হয়েছে ৬৪ হেক্টর, মূলা ৪৩৫ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, পালংশাক ৬৬ হেক্টর ও ধনিয়াপাড়া ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজি চাষ। মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, শিম, মটরশুঁটি, ব্রকলি, শালগম, টমেটো, পালংশাক, পেঁয়াজকলিসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি। নিড়ানি, কীটনাশক প্রয়োগ ও সেচ প্রদানে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবার কোথাও কোথাও আগাম সবজি বিক্রি করছে অনেক চাষি। বর্তমানে বাজারে মিলছে, ফুলকপি, শিম, পালংশাক, টমেটো, মূলা। শীতের আগাম সবজি হওয়ায় বাজারে এগুলো দাম তুলনামূলক বেশি।

চাষিরা বলছেন, এখনও শীত আসেনি। শীতের সবজি বাজারে আসতে এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন বাকি। এখন বাজারে যে শীতের সবজিগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো শীতের আগাম চাষের সবজি। মৌসুমে কোন সবজি চাষে যে পরিমাণের খরচ হয়, সে তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি খরচ হয় আগাম চাষে। মৌসুমের আগে বা পরে কোন সবজি চাষ করতে গেলে সেচ কীটনাশক বাবদ খরচ বেড়ে যায়। ফলে দাম বাড়াতে বাধ্য হয় কৃষকরা।

রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার চাষি আফজাল হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে কিছু ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে। দামও বেশি। এগুলো শীতের সবজি হলেও আগাম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই ফুলকপিগুলো আকারে ছোট, ওজনে কম। এই ফুলকপিগুলো শীতের সময়ের হলে আকারে আরও বড় হতো। একই সঙ্গে ওজনেও বেশি হতো। তিনি বলেন, অসময়ের সবজির তুলনামূলক কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। এতে সময়ের তুলনায় খরচ বেশি হয়। তবে এ বছর বর্ষা কম হয়েছে। তাই পচন রোগে আক্রান্ত কম হয়েছে।

সুমন হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, সবজি চাষে মৌসুমগত ব্যাপার থাকে। যেমন খরিপ-১ ও খরিপ-২। এই মৌসুমের মধ্যে আবহাওয়াগত বিষয়ও থাকে। আবহাওয়া ও মৌসুমগত বিষয়ের ওপরে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়। তবে কয়েক বছর থেকে অসময়ে অন্য মৌসুমের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। যেটা আগে পাওয়া যেত না। চাষিরা এক মৌসুমের সবজি অন্য মৌসুমে অধিক মুনাফার জন্য চাষ করে বিক্রি করছেন।

তিনি আরও বলেন, যেমন ফুলকপি। ফুলকপি শীতের সবজি। কিন্তু এই সবজিটা বর্ষায় পাওয়া যাচ্ছে। তুলনামূলক দামও বেশি। আবার স্বাদের মধ্যে কমতি রয়েছে। অনেকেই আছেন এখনকার ফুলকপি খান না। তারা শীতের সময়ের ফুলকপি খাবেন বলে জানান। দাম বেশি হওয়ায় চাষি ও বিক্রেতা খুশি থাকলেও ক্রেতা খুশি হতে পারছেন না। কারণ অন্য সবজির চেয়ে শীতের সবজি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, এখন এই অঞ্চলে ব্যাপকহারে সবজি উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। কৃষক যাতে নায্য মূল্য পায় সেদিকে নজর রাখা দরকার। চাষিরা দিশেহারা কিন্তু বাজারে গেলেই ক্রেতারা দামের কারণে সবজি কিনতে পারছেন না। এতেই লোকসানের সম্মুখীন কৃষকরা। অসময়ে শীতের সবজি কেনা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগ্রহ আছে, আবার নাইও বলা চলে। বেশি দাম হলেও নতুন সবজি হিসেবে কিছুসংখ্যক ক্রেতার আগ্রহ রয়েছে।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও সবজি খুব ভালো হয়েছে। গত বছরে তুলনায় এবার জেলায় সবজি চাষও মোটামুটি ভালো। আশা করি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ এবং উৎপাদন হবে। কেননা কৃষকদের প্রণোদনা ও পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।