আজ উত্তরা-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আজ উত্তরা-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

যানজটের শহরে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের কাছে দিন দিন নির্ভরযোগ্য বাহন হয়ে উঠছে মেট্রোরেল। রাজধানী মহানগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে আগে যেখানে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকতে হতো, এখন মেট্রোরেলে চড়ে তারা অনেকটা চোখের পলকে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে যেতে পারছেন। এটি সম্ভব হয়েছে মেট্রোরেলের কারণে। এতদিন উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রীরা মেট্রোরেল ব্যবহার করছিলেন। এবার এই পরিধি বাড়ছে। যাত্রীরা এখন উত্তরা থেকে মাত্র ৩১ মিনিটে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মতিঝিল পৌঁছাতে পারবেন। আশা করা হচ্ছে আরও বেশি সংখ্যক যাত্রী এখন থেকে মেট্রোরেলের সুবিধা ভোগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন। আগামীকাল থেকে সাধারণ যাত্রীরা উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে আজ (শনিবার) উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে।

আজ দুপুর আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও স্টেশন থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক এ কথা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এরপর প্রধানমন্ত্রী মতিঝিল স্টেশনে আরেকটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য মেট্রোরেল নিয়ে মতিঝিলের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী এদিন এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন। এই লাইন হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে হবে। ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে। এর আগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যায়, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে তিনটি স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল সেকশনের দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার। ফার্মগেট-সচিবালয়-মতিঝিল এই তিনটি স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশন রয়েছে। নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রথম পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা চলবে। মতিঝিল, সচিবালয় ও ফার্মগেট ছাড়া বিজয়সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেশনগুলোতে এখন ট্রেন থামবে না। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে ৫ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে। তবে সকাল সাড়ে ১১টার পর মতিঝিল-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে এবং উত্তরা থেকে আগারগাঁও সেকশনে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার পথ বাড়ানো হয়েছে। এই বর্ধিত অংশ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। প্রতিটি ট্রেন ২৩০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩১ মিনিট। এতে ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা। যাদের র‌্যাপিড পাস থাকবে তারা ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। শুরুর দিকে সীমিত থাকলেও ধীরে ধীরে মেট্রো চলাচলের সময় ও স্টেশন বাড়ানো হবে। কথা হলে উত্তরার বাসিন্দা এবং একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উত্তরার আজমপুর থেকে পাবলিক বাসে মতিঝিল আসতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এর মধ্যে রাজধানীতে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কোনো সমাবেশ থাকলে যানজট পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এই পরিস্থিতিতে মেট্রোরেলে যাতায়াত অনেক স্বস্তিদায়ক ও সময় সাশ্রয়ী হবে।’ বর্তমানে মেট্রোরেলে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত পুরোদমে চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং প্রতিদিন ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী এ ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই পরিমাণ যাত্রী প্রতিদিন মেট্রোরেলে চলাচল করলে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। একই সঙ্গে কর্মঘণ্টা বাঁচবে। গাড়ির জ্বালানি ও পরিচালনসহ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে। পরিবেশ দূষিত হবে কম।