জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস : ৫ মাস স্কুল ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস  :  ৫ মাস স্কুল ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস : ৫ মাস স্কুল ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়

পাবনার সুজানগর উপজেলার বোস্টল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আরিফা খাতুনকে প্রতিদিন  নৌকায় করে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়, তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার।তার ৩ বছর বয়সী বোন জামিলা খাতুন গত মাসের প্রথম দিকে নৌকায় চড়তে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। এরপর থেকে বর্ষার বিপদে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পরিবারটি।

আরিফা বলেন, "আমার বোন ডুবে যাওয়ার পর থেকে, আমার বাবা-মা সবসময় আমাকে নৌকায় করে স্কুলে পাঠানোর জন্য উদ্বিগ্ন থাকেন। তবে এর কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে আমি অনেক ক্লাস মিস করতাম।"

উপজেলার গাজনর বিলে অবস্থিত বিদ্যালয়টি বর্ষা থেকে প্রায় অর্ধ বছর ধরে জলমগ্ন থাকে, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যোগ দিতে নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য করে।গম্প্রতি বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে এই প্রতিবেদককে নিজেই নৌকায় করে বিদ্যালয় ভবনে পৌঁছাতে হয়েছে। তিনি অনেক ছাত্রকে নৌকায় করে স্কুলে যেতে দেখেছেন।

রিয়া খাতুন নামে এক ছাত্রী জানান, স্কুলে যেতে তাকে প্রতিমাসে একজন নৌকার মাঝিকে ১৫০ টাকা দিতে হয়। তবুও, বেশিরভাগ দিন সে দেরি করে কারণ নৌকা তাকে সেখানে নিয়ে যেতে সময় নেয়।।ফলে দীর্ঘদিন ধরেই ক্লাসে উপস্থিতিতে মন্দা চলছে বিদ্যালয়টি। ৬৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র অর্ধেকই ক্লাসে উপস্থিত হতে  পেরেছিল।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মমিন উদ্দিন বলেন, "সরকার ২০১৪ সালে গ্রামে প্রথম এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। শুরু থেকেই আমরা শিক্ষার্থী পেতে সংগ্রাম করে আসছি।"

এখন গাজনর বিল এলাকায় তিনটি বিদ্যালয় রয়েছে, সবগুলোই পানিতে তলিয়ে গেছে এবং প্রবেশযোগ্যতা না থাকায় শিক্ষার্থীর অভাবের সম্মুখীন হচ্ছে।ওই এলাকার শরির ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গিযে একই চিত্র দেখতে পান এই প্রতিবেদক। অনেক শিক্ষার্থীকে ভিজে পোশাকে ক্লাস করতে দেখা গেছে।"আমরা নৌকায় করে স্কুলে যাতায়াত করি, এবং সাধারণত যখন সকালে বৃষ্টি হয়। তাই, এখানে যাওয়ার পথে আমরা ভিজে যাই," বলেছেন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রোহিত খান।

গপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মাসুরা খাতুন বলেন, "কখনও কখনও আমরা নৌকা থেকে পড়ে ভিজে যাই। সৌভাগ্যবশত, আমরা বেশিরভাগই সাঁতার জানি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের অভিভাবকরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।"প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলটি জুনের শেষ থেকে জলমগ্ন ছিল এবং সম্ভবত নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকবে।২৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১২০-১৫০ জন শিক্ষার্থী এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে, তিনি যোগ করেন।

উভয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা সরকারের কাছে স্থায়ী নৌকা সুবিধার দাবি জানিয়েছেন যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সময়মতো পৌঁছে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে।শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এলাকার তিনটি বিদ্যালয়ে প্রায় ৫৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন,"সুজানগর উপজেলার ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটি -- শরির ভিটা,  বোস্তাল ও পাইকপাড়া –প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে পানিতে ডুবে থাকে; যার ফলে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে।""তিনটি বিদ্যালয়ের মধ্যে বোস্টাল এবং শরির ভিটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে বলেছি যাতে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয়," বলেন জব্বার।

ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে তহবিল পেলে আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করব।