২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন দ্বিগুণ ডেনিম রপ্তানি

২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন দ্বিগুণ ডেনিম রপ্তানি

২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন দ্বিগুণ ডেনিম রপ্তানি

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করতে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি দ্বিগুণ করতে হবে।বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু ডেনিম রপ্তানিতে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানে; এমনকি আমাদের অবস্থান চীনের চেয়েও উপরে।’তিনি আরও বলেন, ‘ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের এই সাফল্যের পেছনে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর বিশাল অবদান রয়েছে।’

প্রধান অতিথি হিসেবে আজ ঢাকায় বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম সংস্করণের উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। 

অনুষ্ঠানে ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে ডেনিম ও ডেনিম সম্পর্কিত পণ্য রপ্তানি থেকে। সুতরাং, ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ডেনিম রপ্তানি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সাসটেইনিবিলিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস করি যে ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেবে।’

ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে লিড সনদপ্রাপ্ত ২০৩টি সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ কারখানার উপস্থিতি সাসটেইনিবিলিটির প্রতি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দূঢ় প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে।’তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সেরা ১০০টি সবুজ কারখানার মধ্যে এখন ৫৩টি বাংলাদেশে অবস্থিত।

এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘বর্তমানে বিজিএমইএ ও সরকার দেশে পোশাক শিল্প যাতে নির্বিঘ্নভাবে পরিচালিত হতে পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশে যে নিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশে বিরাজমান, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আসরের সফল আয়োজন তাই প্রমাণ করে।’

এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, এইচঅ্যান্ডএম ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৬ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কোম্পানির জন্য বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে এইচঅ্যান্ডএম একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করার উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি রিসাইক্লিয়ের জন্য আরও নিয়মিত পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরোত্বারোপ করেন। এ ছাড়াও, উদ্ভাবনের ও নতুন কৌশলসমূহ যেগুলো পোশাক শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক সেগুলো আয়ত্ত্ব করার উপর জোর দেন তিনি।   এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, হ্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম গ্রিন সংক্রান্ত উদ্ভাবনের জন্য জিআইএফ এর সঙ্গে কাজ করছে।

অধিকন্তু, কার্বন নির্গমন ও পানি ব্যবহার কমাতে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও তিনি পোশাক শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি সম্পর্কে উল্লেখ করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য মন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানান।

মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ডেনিম শিল্পে বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। ডেনিম শিল্পের সেই অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আয়োজনে ১২টি দেশের মোট ৮০ টি প্রদর্শক অংশ নিচ্ছে। আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া ২ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের প্রায় পাঁচ হাজার দর্শনার্থী নিবন্ধন করেছেন।ডেনিম এক্সপোর এবারের আসরে মোট চারটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (ইকোনমিক) জোশুয়া গাকুটান;  বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কাজী ফাইয়াজ মুরশিদ, বিজিএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি ও তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল দিপু; পুমার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শাখা ব্যবস্থাপক মঈন হায়দার চৌধুরী;  মুনির আহমেদ, পরিচালক, এম অ্যান্ড জে গ্রুপ; মোহাম্মদ আনিস আগুং নুগরোহো, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ; মিস ক্যাথারিনা মায়ার, রিজিওনাল সিআরএম ম্যানেজার, ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট এবং তুরস্ক, ব্লুসাইন টেকনোলজিস এজি; এবং টাকার আসানো, ওয়াইকেকে বাংলাদেশ পিটিই লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ‘২০৩০ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অবস্থান ও সামনের পথ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেবেন।

'১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মানব সম্পদের উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার’শীর্ষক সভায় আলোচনা করবেন- জিয়াউর রহমান, রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়া, এইচএন্ডএম; ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব মিশন; শরীফ জহির, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ; ড. শাহরিয়ার মাহমুদ, চিফ সাসটেইনেবিলিটি অফিসার, স্পিননোভা; সারওয়াত আহমেদ, সিনিয়র এডভাইজার, জিআইজেড; এবং ড. রবিচন্দ্রন এল, ডিরেক্টর - (প্রোডাক্ট ইনোভেশন/বিজনেস), আটলান্টিক কেয়ার কেমিক্যালস।

থিস উডস্ট্রা, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর, আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, পরিচালক, বিজিএমইএ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টিম গ্রুপ; শফিউর রহমান, কান্ট্রি ম্যানেজার, জি-স্টার র; শামস মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাশা ডেনিমস লিমিটেড এবং সাবেক সভাপতি, ডিসিসিআই; মাত্তেও উরবিনি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোকো কেমিক্যালস; এবং আন্দ্রেয়া ভেনিয়ার, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, অফিসিনা+৩৯ 'ডেনিম শিল্পের টেকসই পরিবর্তন' বিষয়ক প্যানেল আলোচনা করবেন।

শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে করণী’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তাদের মধ্যে রয়েছে- আলী মুশতাক বাট, বাংলাদেশে ডেনমার্কের দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর অ্যান্ড হেড অব ট্রেড মিশন; মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ; শহিদ উল্লাহ আজিম, সহ-সভাপতি, বিজিএমইএ; লুথমেলা ফরিদ, পরিচালক, প্যাসিফিক জিন্স; আদিব সাজ্জাদ, কান্ট্রি ম্যানেজার, সলভেই৮; এবং দীপক শাহ, গ্রুপ সিইও (বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম), টেক্স ফাস্টেনারস।

সূত্র : ইউএনবি