মধ্যরাতে রাবির হলে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর

মধ্যরাতে রাবির হলে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর

সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে মধ্যরাতে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করায় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। 

বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কমিটির আহ্বায়ক শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক ড. গৌতম দত্ত। তিনি জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত প্রতিবেদনে পেয়েছি এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অবিহিত করা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর প্রথম প্রহরে (রাত দেড়টা) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে উচ্চশব্দে গানবাজনা, চিৎকার ও লাফালাফি করছিলেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন আকাশ ও তার অনুসারী ইমরান ও সম্রাট। আওয়াজ প্রকট হওয়ায় আশপাশের রুমে ঘুমাতে না পেরে ওপর তলার ৩১৫ নম্বর কক্ষ থেকে নিচে আসেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদত ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম। তখন আকাশকে দেখতে পেয়ে গান কোথায় হচ্ছে জানতে চাইলে চটে যান এই ছাত্রলীগ নেতা এবং উভয়ের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। 

এরমধ্যে কক্ষ থেকে বের হন ইমরান ও সম্রাট এবং তর্কাতর্কির একপর্যায়ে শাহাদতের কানে সজোরে থাপ্পড় দেন ইমরান এবং আকাশ ও সম্রাট তাকে টানাটানি শুরু করে। তখন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রায়হান ইসলাম উভয়পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। তিনি এই হলের হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত ইমরান ও সম্রাটের পাশের কক্ষে (২১৭) থাকেন। ঘটনার একপর্যায়ে রায়হানকেও মারধর করেন ইমরান ও সম্রাটসহ আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আমির হামজা, নাজিম ও অন্যান্যরা। এ ঘটনার বিচার চেয়ে সেইদিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পৃথক দুইটি অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগীরা। তবে অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয় বলে জানান অভিযুক্তরা। 

হল সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার করতে কক্ষ দখলে নিয়ে আবাসিক হলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী রাখেন ছাত্রলীগ নেতা আকাশ। তিনি হলের ২০৫ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী হলেও পরবর্তীতে কক্ষ পরিবর্তন করে ২১১ নম্বর কক্ষে যান। এই কক্ষের আবাসিক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের রকি মন্ডল এবং পরিসংখ্যান বিভাগের কিরণ রবি দাস। পরবর্তীতে কিরণ দাস ২০৫ ও রকি ২০৬ নং কক্ষে গেলে ২১১ নং কক্ষ একাই দখলে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগ নেতা আকাশ। 

এছাড়া প্রভাব খাটিয়ে ২০৮ নম্বর কক্ষও দখল নিয়ে তার অনুসারী আমির হামজা ও নাজিমকে রাখেন তিনি। তারা কেউ ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়। আমির হামজা শহীদ শামসুজ্জোহা হল এবং নাজিম নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এদিকে, সিট ফাঁকা না থাকায় অনেক এলোট পাওয়া শিক্ষার্থী হলে ওঠতে না পেরে ভোগান্তিতে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন হাসান জানান, প্রায় গত দুইমাস আগে হলে আবাসিকতা পেলেও সিট ফাঁকা না থাকায় হলে ওঠতে পারছি না। কবে সিট ফাঁকা হবে সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না। তবে মাসে মাসে সিট ভাড়া দিতে হচ্ছে। 

অন্য হলে থাকার কারণ জানতে চাইলে আমির হামজা বলেন, তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলে এখনও উঠেননি। তবে নিজের আর্থিক সমস্যার কারণে শহীদ হবিবুর রহমান হলে নিজ বিভাগের এক ভাইয়ের কক্ষে অতিথি হিসেবে অবস্থান করছেন। হল প্রাধ্যক্ষ তাকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিলে তিনি বের হয়ে যাবেন।

নাজিম বলেন, তিনি নবাব আব্দুল লতিফ হলে উঠেছিলেন। কিন্তু হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কাছে অর্থ দাবি করায় তিনি তার বন্ধু হামজার পরামর্শক্রমে হবিবুর রহমান হলে এসে আপাতত থাকছেন।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা আকাশ জানান, আমার রুমে আমিসহ আরেকজন থাকি, তবে সে কম থাকে। ২০৮ নং রুমে তার অনুসারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা এই হলের না হলেও ওই রুমটি জিহাদের নামে আছে। তারা গেস্ট হিসেবে সেখানে এখন থাকছে। এ বিষয়টি নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলেছি আমরা।

হলে সিট দখল ও অন্য হলের শিক্ষার্থী থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম জানান, আমি এই হলে অবস্থানরত অন্য হলের শিক্ষার্থীদের বের হয়ে যেতে এর আগে নোটিশ দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে বিশ্বদ্যিালয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করব। ২০৮ কক্ষে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুয়েকদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অন্য হলের কাউকে হলে থাকার অনুমতি দেয়া হয়নি।