কুড়িগ্রামে বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ,পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাব

কুড়িগ্রামে বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ,পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাব

ছবি: ইউএনবি

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বানভাসীদের দুর্ভোগ কমেনি। এখনো বিপদসীমার ওপরে পানি অবস্থান করায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে আছে।

রবিবার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে গিয়ে চিলমারী পয়েন্টে ১৩সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়ায় ৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সে.মি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা ৯ দিন ধরে বন্যার পানি অবস্থান করায় সংকটে রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।

এদিকে জেলায় ত্রাণ নিয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। অপ্রতুল ত্রাণের কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। উপজেলাগুলো থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দ প্রদানের কথা বলা হলেও অনেক জনপ্রতিনিধি বরাদ্দ পাননি বলে জানিয়েছেন। বন্যার ৯ম দিন পেরিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় পৌঁছেনি বানভাসীদের জন্য পাঠানো কাঙ্ক্ষিত ত্রাণ সামগ্রী।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যার শুরুতেই ২০৩ মেট্রিকটন চাল ও ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ২ কোটি টাকা ও ২ হাজার টন চালের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ইতোধ্যে আবারো ২ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এসেছে। সবার সাথে সমন্বয় করেই ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলোতে বরাদ্দ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

ইউএনবির এই প্রতিনিধি জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিতে গেলে সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা নানা অসঙ্গতির কথা জানান। বন্যায় আক্রান্তের তুলনায় অনেক ইউনিয়নে দেয়া হয়েছে কম বরাদ্দ। ভীষণ চাপে রয়েছেন সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।

নাগেশ্বরীর নদীবেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন বল্লভের খাসের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো বন্যার্তদের তালিকা চূড়ান্ত করিনি।’ উপজেলা থেকে তার ইউনিয়নে ত্রানের কোন বরাদ্দ আসেনি বলে তিনি দাবি করেন।

তবে নাগেশ্বরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম দাবি করেন, ‘বল্লভের খাসসহ আমরা বন্যায় আক্রান্ত প্রতিটি ইউনিয়নে ৬০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। আমি নিজেই ওই ইউনিয়নে দুদিন আগেই ৫০টি পরিবারে ত্রাণ দিয়েছি।’

একই অভিযোগ চিলমারীর অস্টমীর চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তালেবের। তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৩ হাজার পানিবন্দী পরিবারের জন্য এখনো কোনো ত্রাণ বরাদ্দ পাইনি।’

এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী। আমি মাত্র ২০০ প্যাকেট ত্রাণ পেয়েছি। যা বজরা কলেজ মাঠে বিতরণ করছি।’

তিনি বলেন, ‘৯টি ওয়ার্ডে বিভাজন করতে গিয়ে কোনো কোনো ওয়ার্ডে মাত্র ৮ থেকে ১০টি পরিবারে ত্রাণ দিতে পেরেছি। এখনও শত শত পরিবার ত্রাণের জন্য চাপ দিচ্ছে।’

এই উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী। আমি বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ৩০০ প্যাকেট।’

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, ‘সবার সিদ্ধান্ত অনুসারে রেসিও করে ইউনিয়নগুলোতে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’ তার উপজেলায় ইউনিয়নগুলোতে কত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার সংখ্যা জানেন না তিনি। এ ব্যাপারে ত্রাণ বিভাগে খোঁজ নিতে বলেন তিনি।

রাজারহাট উপজেলার সবচেয়ে পানিবন্দী ও ভাঙন কবলিত বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে ৭০০ পরিবারের মধ্যে ৪০০ পরিবার ত্রাণ পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পানিবন্দী ২ হাজার ১০০ পরিবারের মধ্যে মাত্র ৪০০ পরিবারে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হয়েছে। এখনো ১৭০০ পরিবার ত্রাণের আওতার বাইরে রয়েছে। 

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার বন্যা কবলিত ৩টি ইউনিয়নে পানিবন্দী ১৭ হাজার ২৫০টি পরিবার। ত্রাণ বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২ হাজার ৯০০ পরিবারের জন্য।

চর রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবিরুল ইসলাম বলেন, ‘কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা মানুষকে সহযোগিতা করে আসছি। চলমান বন্যায় রাজিবপুর ইউনিয়নে ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ১ হাজার ৫০টি পরিবার, কোদালকাটি ইউনিয়নে ৬ হাজার ২৫০টি পরিবারের মধ্যে ৯০০ পরিবার এবং মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে ৬ হাজার পারিবন্দী পরিবারের মধ্যে ৯৫০ পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আমরা আরও ৫০ মেট্রিকটন চালের চাহিদা দিয়েছি।’ সূত্র: ইউএনবি