জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ছবি: সংগৃহীত

এক নতুন ভোর, এক নতুন সূর্য। আজ থেকে ঠিক ৫২ বছর আগে এ সূর্য উদিত হয়েছিল এ বাংলায়। অর্জিত হয় স্বাধীনতাকামী বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদারদের আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে বিজয় লাভ হয়। আর এ মাসেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশ আত্মপ্রকাশ করে। সেই থেকে বাঙালির অহংকার ও গৌরবের মাস ডিসেম্বর।

আজ ১৪ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়েছিল জয়পুরহাট। ৭১’র ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে দেশের অনেক জেলা পাক হানাদার মুক্ত হতে থাকলেও যুদ্ধ চলে জয়পুরহাটে। এ জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভূঁইডোবা সীমান্ত অতিক্রম করে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার দল। চালিয়ে যেতে থাকে যুদ্ধ।

ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও উল্লাসের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পায়ে হেঁটে একদল পাঁচবিবির দিকে যায়, আরেকদল জয়পুরহাটের দিকে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের আসার খবরে জীবন বাঁচাতে পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যবাহিনী ও তাদের দোসররা তখন পালিয়ে বগুড়া ও ঘোড়াঘাটের দিকে ছুটে যায়।

মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি সেদিন জয়পুরহাটের ডাক বাংলোতে প্রবেশ করে এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ভোরের আকাশকে রাঙিয়ে তোলে। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান (বাঘা বাবলু) এইদিন জেলা শহরের ‘পুরোনো ডাক বাংলো’ চত্বরে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা উড়ান।

এইদিন ওই চত্বরটি মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কেঁপে ওঠে। সমবেত কণ্ঠে তারা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ওঠেন। এরপর তারা জয়পুরহাট সিও কলোনি, জয়পুরহাট চিনিকলে পতাকা উত্তোলন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক-হানাদার বাহিনীরা জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে দশ হাজারের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে এসে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এরপর মাটিতে গর্ত করে জয়পুরহাট সদরের পাগলা দেওয়ান এলাকায় গণকবর দেয়। সেটিই এখন পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি নামে পরিচিত।

এছাড়াও সদরের কড়ই কাদিপুর গ্রামে ৩৭১ জন মৃৎ শিল্পীকে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা। এখানে একটি বধ্যভূমি রয়েছে। বিজয়ের এ দিনকে স্মরণ রাখার জন্য জয়পুরহাটে শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে ৭১ ফুট উঁচু শহীদ স্মৃতি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

চকবরকত ইউনিয়নের নামুজা গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল জোব্বার বলেন, যুদ্ধের সময় আমি যুবক ছিলাম। যুদ্ধের সময় মরবো না বাঁচবো, সেই আশা আমার ছিল না। জীবন চলে গেলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার কথা মাথায় ছিল। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়। এদেশে অনেক গণকবর আছে। সব গণকবর সংস্কার করা হয়নি। ওই গণকবরগুলো সংস্কার করে যুদ্ধে নিহতদের স্মৃতি তুলে ধরলে তাদের স্মরণ করা যাবে।

জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আর এই দিনেই জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও ৭১’র সেই পরাজিত শক্তিরা, স্বাধীনতাবিরোধীরা আজকে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটাক্ষ করছে। তা দেখে আমরা বিস্মিত হচ্ছি। বর্তমান সরকার সকল ষড়যন্ত্রকারীদেরকে এবং যুদ্ধাপরাধীদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে এসে শান্তি দেবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।