বাংলাদেশে মায়েদের মৃত্যু

বাংলাদেশে মায়েদের মৃত্যু

ছবি: মা ও শিশু

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

প্রতিটি গর্ভধারণে মায়েদের রয়েছে মৃত্যুর ঝুঁকি। যদিও প্রেগন্যান্সি ফিজিওলোজিক্যাল ব্যাপার; তবুও যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে। বাংলাদেশে মায়েদের মৃত্যুর পাঁচটি সাধারণ কারণ:

প্রথম, রক্তক্ষরণ: যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ। প্রসব পূর্বে অথবা প্রসব পরবর্তী সময়ে, গর্ভের প্রথম দিকে যেমন: এবোরশন, একটোপিক প্রেগনান্সি, মোলার প্রেগনান্সি। এই রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজে বেশি সংখ্যক মা মারা যায়।

দ্বিতীয় কারণ: একলামশিয়া, প্রিএকলামশিয়া যাকে বলা হয় খিঁচুনি।

তৃতীয়: অনিরাপদ বা সেপটিক এবোরশন।

চতুর্থ: পিউরপেরিয়াল সেপসিস বা গর্ভ পরবর্তী প্রদাহ জনিত কারণ। গ্রামের ভাষায় বলে সুতিকা রোগ।

পঞ্চম: অবস্ট্রাকটেট লেবার/ বাধাগ্রস্থ প্রসব।

পরোক্ষ কারণ: রক্ত শুন্যতা, জন্ডিস, হার্ট ডিজিজ।

রক্তক্ষরণ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। মৃত্যুহার একই। এখানে পরিবেশের চেয়ে কত দ্রুত রোগীকে ম্যানেজ করা যায় তার উপর নির্ভর করছে মায়েদের জীবন মৃত্যু।

প্রি একলামশিয়া প্রতিরোধ করা যায় না। তবে একলামসিয়া সঠিক চিকিৎসা পেলে কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়। যেমন গর্ভকালীন পর্যবেক্ষণের সময় যাদের ব্লাড প্রেশার বেশি, যাদের পূর্বে এ সমস্যা ছিল, যাদের দ্রুত ওজন বাড়ছে, যাদের প্রসাবের সাথে বেশি এলবুমিন, প্রোটিন যাচ্ছে, যাদের টেস্টে রক্তে ইউরিক এসিড বেশি আছে সেসব গর্ভবতী মায়েদের খুব যত্নসহকারে মনিটর করতে হবে। তাকে প্রয়োজন হলে ভর্তি দিয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে প্রয়োজন অনুপাতে ব্যবস্থা পত্র দিতে হবে। তাকে ক্লাচ্প থেরাপি দিয়ে লো ডোজে এসপিরিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। বিশ্রামে রোগীর রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। শরীরে পানি এসে ফুলে গেলে সেটাও কমিয়ে দেয়। এসব রোগীদের যদি চোখে ঝাপসা দেখে, ডাবল দেখে, মাথা ব্যাথা করে, ডান পাশের উপরের বুকে ব্যাথা থাকে অথবা প্রসাব লাল ও পরিমানে কম হয় তবে তাড়াতাড়ি ভর্তি করতে হবে। তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়ে জরুরি ডেলিভারি করতে হবে। তাছাড়া মা ও বাচ্চা দু'জনের জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি অবশ্যম্ভবী।

যাদের একবার একলামশিয়া হয়েছে তাদের আবার ২৫% কেসে হতে পারে। যে সব মেয়েদের মনে করা হয় একলামশিয়া হতে পারে সেখানে সেপটিক এবোরশনে প্রায় ২০% মা মারা যায়। সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এমআর পদ্ধতি চালু রয়েছে। অপরিকল্পিত বাচ্চা এসে গেলে যাতে মেয়েরা সঠিক পদ্ধতিতে টারমিনেট করতে পারে এবং মায়ের মৃত্যু কম হতে পারে পারে সেই উদ্দেশ্য এই এমআর বা মিনস্টুয়াল রেগুলেশন প্রদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এইসব অপরিকল্পিত গর্ভ হলে তারা কাঠি ঢুকিয়ে যেখানে সেখানে এবোরশন করে। ঠিকমত চিকিৎসার অভাবে জ্বর ও গন্ধযুক্ত রক্তক্ষরণনের ফলে সেপটিসিমিয়া হয়ে মারা যায়।

ডেলিভারির পর বিভিন্ন অসুখ হয়। গ্রামে এটাকে সুতিকা রোগ বলে। এখানে প্রায় ১১% মা মারা যায়। ডেলিভারি আনহাইজিনভাবে করা হয়ে থাকে। যখন তখন স্টেরাইল গ্লাভস ছাড়া ভেতরে হাত দিয়ে এক্মামিন করছে। যাদের আগেই পানির ঠুসি ভেঙ্গে যায়। কোন চিকিৎসা দেয়া হয়না। যার ফলে সেটি সেপসিমিয়া হয়ে মারা যায়।

বাধাগ্রস্থ ডেলিভারি বা অবস্ট্রাকটিভ লেবার। এসময় জরায়ু ফেটে ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়ে সাথে সাথে রোগী মারা যায়। অথবা সেপটিসিমিয়া হয়েও মারা যায়। এনিমিয়া বা রক্ত শুন্যতা হলে প্রেগন্যান্সির সময় হার্ট ফেইলর হয়ে মারা যায়। প্রেগনেন্সিতে প্লাজমা ভলুম বাড়ে ৫০% আর আয়রন বাড়ে মাত্র ১০%। ফলে হেমো ডায়লেটেশন হয়ে হার্ট ফেল আরো বেশি হয়। হার্ট ডিজিজ আমাদের দেশে বেশি হয়। ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বেশি হয়। যেমন: মাইট্রাল স্টেনোসিস ভালব চিকন হয়ে যায়। চিকিৎসা দেয়ার সুবিধার্থে হার্ট ডিজিজকে চারটে গ্রেডে ভাগ করা হয়েছে। গ্রেড ৩ এবং ৪ এর সময় বাচ্চা নেওয়া নিষেধ। বাচ্ছা এসে গেলেও প্রথম ৬ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা এমআর করার জন্য ডাক্তাররা সাজেশন দিয়ে থাকেন। তা নাহলে মায়ের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। জন্ডিস গর্ভবতী মায়ের জন্য ৮০% মৃতুর ঝুঁকি হেপাটিক কমা। ডেলিভারির সময় পোস্ট পার্টাম হেমোরেজ হয়ে মৃত্যু হতে পারে।