কীর্তিমানদের কীর্তিকলাপ

কীর্তিমানদের কীর্তিকলাপ

ছবি: অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক

সাদাসিধে প্রফেসরঃ

প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক (১৯১৪-১৯৯৯) ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় অধ্যাপক। তাঁর জ্ঞান সাধনার জন্যে অনেকে তাঁকে জ্ঞানতাপসও বলে থাকেন। তাঁর পান্ডিত্যে চুম্বকের মত একটা আকর্ষণ ছিল। যেকারনে দেশ বিদেশের অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তিও প্রফেসর রাজ্জাকের সম্মোহনে আকৃষ্ট হয়েছেন।এমনই একজন ব্যাক্তি আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১)। চিন্তাবিদ, স্পষ্টভাষী, একরোখা স্বভাবের সাহিত্যিক। উনিশ‘শ বাহাত্তর সাল থেকে শুরু করে উনিশ‘শ চুরাশি সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আহমদ ছফার সাথে প্রফেসর রাজ্জাকের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এই যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁদের মাঝে গড়ে ওঠে হৃদ্যতা।

চিরকুমার এই শিক্ষক অত্যন্ত সাদামাটা পোশাক পরতেন। তাঁর শিক্ষাদানের প্রতিষ্ঠান ও বিশেষ কোন উপলক্ষ্য ছাড়া তিনি লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরে চলাফেরা করতেন। লুঙ্গির রং সাদা হওয়ায় অনেক সময় সেটাকে বেশ মলিন দেখাত। এত বড় পন্ডিত কিন্ত কথা বলতেন খাস ঢাকাইয়া ভাষায়। তাঁর এই বৈশিষ্টের কারণে অপরিচিত লোকের কাছে তিনি ছিলেন অপাংক্তেয়।

একবার আহমদ ছফা একটা প্রেস করেছিলেন। সেই প্রেস থেকে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হতো। বত্রিশ নম্বর তোপখানা রোডে ছিল তার অফিস। তখন আহমদ ছফা মিরপুরে থাকতেন আর প্রফেসর রাজ্জাক থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে। একদিন আহমদ ছফা প্রফেসর রাজ্জাককে তাঁর প্রেস পরিদর্শনের অনুরোধ করেন।পরের দিন অফিসে এসেই  আহমদ ছফা তাঁর প্রেসের ম্যানেজারের মুখে শুনলেন, একজন লুঙ্গী, চাদর এবং পাঞ্জাবি পরা বুড়ো মত মানুষ বেলা নটার সময় এসে অনেকক্ষণ তাঁর (আহমদ ছফা) নাম ধরে ডাকাডাকি করেছেন।  প্রফেসর রাজ্জাক যে পরদিনই প্রেসে চলে আসবেন তা তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি অফিস খুলে বসতে দেননি কেন? ম্যানেজার তাঁকে জানালেন, আমি মনে করেছি প্রেসের মেশিনম্যান কিংবা কম্পোজিটরের চাকরি চাইতে লোকটা এসেছিল। আমাদের মানুষের কোন প্র্রয়োজন নেই। তাই বলে দিয়েছি আমাদের এখানে কোন মানুষের দরকার নেই। শুনেই লোকটা চলে যায়।

--খালেদ ইকবাল