বিয়ে কী? ইসলামে এর বিধান

বিয়ে কী? ইসলামে এর বিধান

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, বিয়ে হলো একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে নিষ্পন্ন বৈধ বন্ধন ও সামাজিক চুক্তি। ইসলামে বিয়ে হলো একটি সুন্নাহ বা মুহাম্মাদ (সা.) এর আদর্শ এবং ইসলামে বিয়ে করার জন্য অত্যন্ত জোরালোভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ইসলামে সন্ন্যাসজীবন এবং কৌমার্যেরও কঠোর বিরোধিতা করা হয়েছে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন- وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

অর্থ: ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে’।  (সূরা: আর-রূম, আয়াত: ২১)

ইসলামে বিয়ের বিধান নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

ইসলামে বিয়ের রুকন বা মৌলিক ভিত্তি

(১) বর-কনে উভয়ে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হওয়া।

(২) ইজাব বা প্রস্তাবনা এটি হচ্ছে বরের কাছে মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থান করা। যেমন- ‘আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম’। অথবা এ ধরনের অন্য কোনোভাবে প্রস্তাব পেশ করা।

(৩) কবুল বা গ্রহণ করা এটি বর বা তার প্রতিনিধির সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন- ‘আমি কবুল বা গ্রহণ করলাম’। ইত্যাদি।

বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত

(১) বর-কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া।
(২) বর-কনে একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া।

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘স্বামীহারা নারী (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)-কে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিয়ে দেওয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে)  ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জার দরুন) থাকাটাই তার সম্মতি’। (বুখারি, হাদিস নম্বর: ৪৭৪১)

(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও’। (সূরা: আন-নুর, আয়াত:৩২)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল’। (তিরমিজি, হাদিস নম্বর:  ১০২১)

(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোনো বিবাহ নেই’। (সহিহ জামে, হাদিস নম্বর:  ৭৫৫৮)

সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন নারী সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার-৩৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১২৬৮)

বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর’। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর: ১০৭২)

কনের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত

১. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া।
২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
৩. দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।
৪.অভিভাবক কনের ধর্মানুসারী হওয়া। সুতরাং কোনো অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
৫. ন্যায়পরায়ণ হওয়া। অর্থাৎ ফাসেক না হওয়া। কিছু কিছু আলেম এ শর্তটি আরোপ করেছেন। অন্যেরা বাহ্যিক ‘আদালত’কে (ধর্মভীরুতা) যথেষ্ট বলেছেন। আবার কারো কারো মতে, যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণ বিবেচনা করার মতো যোগ্যতা থাকলেও চলবে।
৬.পুরুষ হওয়া।  প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘এক নারী অন্য নারীকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা নারী নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিণী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়’। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর:  ১৭৮২; সহিহ জামে  ৭২৯৮)
৭. বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের ‘কুফু’ বা সমতা ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতাবান হওয়া।

ফিকাহবিদরা অভিভাবকদের ধারা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কাছের অভিভাবক না থাকলে দূরের অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে।