ইমরান খানকে ছাড়াই পাকিস্তানে ভোট আজ

ইমরান খানকে ছাড়াই পাকিস্তানে ভোট আজ

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে ১৬তম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। দেশটিতে ভোটগ্রহণের ১৪ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বিধান রয়েছে। 

এই নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ইমরান খানের অনুপস্থিতি। একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইমরান কারাগারে বন্দী। চারটি মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর এবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে যিনি এগিয়ে আছেন, সেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে একের এক মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটা নির্বাচন নয়, সিলেকশন। নির্বাচনে যে নওয়াজ শরিফ ও তার দল জয় পাবে, সেটা আগেই বলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে কোনো সরকারই ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ ভোগ করতে পারেনি। কোনো না কোনো অজুহাতে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে বা হতে হয়েছে।

দেশটির সামরিক বাহিনী মুখ্য সব রাজনীতিকদের মুক্তি আর জেলবন্দির পেছন ভূমিকা পালন করছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। যদিও সামরিক বাহিনী প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। অথচ নওয়াজ শরিফই একসময় সামরিক বাহিনীর চক্ষুশূল ছিলেন বলে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। এদিকে নির্বাচনের আগের দিনই বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জনের প্রাণ গেছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, নির্বাচনে ভোটারদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজা।

৩৩৬টি আসন নিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ গঠিত। সরাসরি ভোট হবে ২৬৬ আসনে। সংরক্ষিত আসন ৭০টি। এর মধ্যে ১০টি আসন অমুসলিমদের জন্য। ভোটের নির্বাচনে প্রতিটি দলের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে সংরক্ষিত আসনগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তানে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৮০ লাখ। নিবন্ধিত দল ১৬৭টি। জাতীয় পরিষদে প্রার্থী ৫ হাজার ১২১ জন। এ ছাড়া ৪ প্রদেশে প্রাদেশিক নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রার্থী ১২ হাজার ৬৯৫ জন।

বিভিন্ন দল থেকে ভোটে জয়ী প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হবেন। যেকোনো দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের।

জাতীয় পরিষদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে সংসদীয় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী হতে সমর্থন পেতে হবে অন্তত ১৬৯ সংসদ সদস্যের।

নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেবেন মন্ত্রীদের, যাদের মাধ্যমে গঠিত হবে ৫ বছরের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রাদেশিক স্তরে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাদেশিক সরকার গঠনে অনুসরণ করা হবে একই প্রক্রিয়া।

এবারের নির্বাচনী দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)। ৪ বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দলে ফিরেছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সমর্থন রয়েছে নওয়াজের দলের প্রতি।

অন্যদিকে গত নির্বাচনে সরকার গঠন করা পাকিস্তান তেহেরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতারা এবার নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। নির্বাচনে অনিয়মের দায়ে গত ডিসেম্বরে দলের প্রতীক ব্যাট বাতিল করা হয়। এদিকে দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান নানা মামলায় রয়েছেন কারাগারে। ১০ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে গতবারের এই প্রধানমন্ত্রীকে।

তবে এর মধ্যেই নির্বাচনে শুধু অংশই নয়, নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নেন ইমরান খান। এ সংকটে নির্বাচনী প্রচারের ভিন্ন পথ বেছে নেয় ইমরানের দল পিটিআই। প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেকটা গেরিলা কৌশলে অপ্রচলিত প্রচার চালিয়েছে দলটি।

যেহেতু ইমরান খানের সভা–সমাবেশে সরাসরি অংশ গ্রহণের সুযোগ ছিল না, তিনি কারাবন্দি অবস্থায় রয়েছেন, তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে প্রচার চালিয়েছেন ইমরান খান। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিটিআইয়ের পক্ষে এ প্রচারের নেতৃত্ব দিয়েছে শিকাগোভিত্তিক একটি দল। 

আলোচনায় রয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। গত বছর পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। জোট সরকার গঠিত হলে বিলাওয়াল কিংমেকার হবেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা, সেনা হস্তক্ষেপের বাইরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বেকারত্ব হ্রাস ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।