ভিআইপি সংস্কৃতি অসাংবিধানিক- ড. ইফতেখারুজ্জামান

ভিআইপি সংস্কৃতি অসাংবিধানিক-  ড. ইফতেখারুজ্জামান

ছবি সংগৃহিত।

বাংলাদেশে ভিআইপিদের বিশেষ সুবিধা অর্জনের বিষটি অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "ফেরিঘাটে ছাত্র মারা যাওয়ার ঘটনা ভিআইপি হিসেবে তাদের বিশেষ সুবিধা অর্জনের নামে অসাংবিধানিক, সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, বৈষম্যমূলক এবং একই সাথে অনৈতিক ও অমানবিক দৃষ্টান্ত। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।"

এ ধরণের চর্চাকে সুস্পষ্টভাবে 'ক্ষমতার অপব্যবহার' বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার জন্য একটি ফেরি ছাড়তে তিন ঘণ্টা দেরি করায় সংকটাপন্ন এক রোগী অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায়।সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুল ছাত্র তিতাস ঘোষকে যখন ঢাকায় নেয়া হচ্ছিল তখন মাদারীপুরের একটি ফেরিঘাটে দীর্ঘসময় আটকে ছিল অ্যাম্বুলেন্সটি।

এ ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর সরকার এ ঘটনার ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভিআইপি যাতয়াতের জন্য গণপরিবহণে সাধারণ মানুষের হয়রানির ঘটনা নতুন নয়। মিস্টার ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের তথাকথিত ভিআইপি সুবিধা রয়েছে। তবে সেই সুবিধার 'একটা সীমারেখা' থাকতে হবে।

তিনি বলেন, " বাংলাদেশে যে ভিআইপি তার জন্য সুবিধার সীমারেখা রয়েছে। যারা ভিআইপি তাদের কার্যালয় নির্ধারিত, তাদের চেয়ারটা নির্ধারিত, তাদের গাড়িটা নির্ধারিত, তাদের বাড়িটা নির্ধারিত। এই ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।" তবে জনগণের ব্যবহারযোগ্য যে সুযোগ-সুবিধা যেমন রাস্তাঘাট, তা তারা [ভিআইপি ব্যক্তিরা] দখল করে নিবেন বা বন্ধ করে দেবেন - তা কোন ভিআইপি আচরণ হতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার মতে, "ভিআইপি হতে গেলে ভিআইপির সত্ত্বাটা তা অর্জন করতে হয়। সেটা জোর করে আদায় করা যায় না। মানুষকে বিপদে ফেলে জিম্মি করে ভিআইপি সুবিধা ভোগ করা কোন অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।" তিনি বলেন, ভিআইপি সংস্কৃতির কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সীমাহীন পর্যায়ে চলে গেছে।

কিছুদিন আগে, ভিআইপিরা দাবি তোলেন যে রাস্তার একটা নির্ধারিত অংশ তাদের জন্য রাখতে হবে এবং বিমানবন্দরে তাদেরকে নিরাপত্তা তল্লাশি করা যাবে না। মিস্টার ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "ক্ষমতার এধরণের সীমাহীন অপব্যবহার কোনভাবেই একটা গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। ভিআইপিদের সুনির্দিষ্টভাবে সীমারেখা চিহ্নিত থাকতে হবে যে কোন কোন সুযোগ-সুবিধা তারা পাবেন আর কোন কোনটা পাবেন না।""ভিআইপিদের বিশেষ সুবিধার বোঝাটা যেহেতু জনগণকেই শেষমেশ নিতে হয় - সেটা অর্থমূল্যে হোক কিংবা মানসিক জীবনের মূল্যে হোক, তাই তাদের মতামত নিতে হবে যে তারা এই বোঝাটা নিতে চায় কিনা," তিনি বলেন।