চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

ফাইল ছবি

পৃথক পৃথক হামলা, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, কেন্দ্র দখলের চেষ্টাসহ বেশকিছু অভিযোগের মধ্যেই চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। 

এরমধ্যে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে পটিয়ার একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির অভিযোগে আনোয়ারার এক কেন্দ্রে দেড় ঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও ছুরি নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ, কেন্দ্র দখলের চেষ্টাসহ আরো বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রিটানিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছিলো। এরমধ্যে দু’একটি কেন্দ্রে কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। প্রশাসন দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও চার উপজেলার অধিকাংশ কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।

নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানান, চার উপজেলায় মোট ভোটার ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬০১ জন। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৫০ জন প্রার্থী প্রতিন্ধীতা করছেন। এরমধ্যে পটিয়ায় ১২৮টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৫, বোয়ালখালীতে ৮৬টি কেন্দ্রে ২ লাখ ১০ হাজার ৩৪০, আনোয়ারায় ৭৪টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৩৩ হাজার ১০৯ এবং চন্দনাইশে ৬৮টি কেন্দ্র্রে ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৭ জন ভোটার রয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো এবারও ভোটার উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। গতকাল সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর অনেক কেন্দ্র ফাঁকা দেখা গেছে। কেবল দলীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রের বাইরে ভীড় করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের খবর পাওয়া যায়। প্রথম  তিন ঘন্টায় ৫-৭% পর্যন্ত ভোট পড়তে দেখা গেছে। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে এর চেয়েও কম ভোট পড়ে। এরসাথে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী হতে থাকে।

সকাল ৯টার দিকে বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ রজভিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে ছুরি নিয়ে ঢুকে পড়ে স্থানীয় রেজাউল নামের এক যুবক। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। বোয়ালখালী থানার ওসি আছহাব উদ্দিন জানান, ওই কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা হওয়ার পর ওই যুবক ছুরি নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে। পরে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটিয়ার পূর্ব পিংগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শতাধিক লোক হামলা চালায়। এসময় ৯টি ব্যালট বই, ৫৫১টি ব্যালট পেপার, মার্কিং সিল ও অফিসিয়াল সিল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী রিটার্নিং কমকর্তাসহ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতের ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়।

আনোয়ায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির জেরে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বশিরুজ্জামান স্মৃতি শিক্ষাকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এহসানুল হক জানান, একজন ভোটার ভোট দিতে আসলে এক প্রার্থীর কিছু সমর্থক তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এতে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরী ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হকের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হলে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী হয়। একারণে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। পরে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগীতায় পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

এই উপজেলার আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও তৌহিদুল ও মোজাম্মেলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আঘাতপ্রাপ্ত হলেও ঘটনাটি কেন্দ্রের বাইরে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ভোটগ্রহণ করা হয় বলে জানান প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রিজোয়ান উদ্দিন।

অন্যদিকে পটিয়ার হাইদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুনুর রশিদের সমর্থক আবুল হাসনাত ফয়সাল (৪২) ও মো. ওয়াসিমকে (৩৫) কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।