নামাজের সময় প্রস্রাব বেরোলে করণীয় কী

নামাজের সময় প্রস্রাব বেরোলে করণীয় কী

ছবি: সংগৃহীত

নামাজের জন্য অজুসহ পবিত্র থাকা শর্ত। কিন্তু এমন অনেকে রয়েছেন, যাদের নামাজরত অবস্থায় ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব বের হয়। তাদের করণীয় কী? এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, তাদের প্রথম করণীয় হলো- প্রস্রাবের পর দাঁড়িয়ে এবং হেঁটে হেঁটে মাটির ঢিলা বা টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করা। এতে প্রস্রাব ভালোভাবে বেরিয়ে আসে। যাকে শরিয়তের পরিভাষায় ইস্তিঞ্জা বলে। এভাবে করলে আশা করা যায়, আর প্রস্রাব বের হবে না।

এরপরও যদি সারাক্ষণ অল্প অল্প প্রস্রাব বের হয় এবং ফরজ নামাজ পরিমাণ সময়ও পাওয়া না যায়, তাহলে এমন ব্যক্তি শরিয়তের পরিভাষায় মাজুরের অন্তর্ভুক্ত। তাকে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য নতুন করে অজু করতে হবে এবং এই অজু দিয়ে ফরজ বা নফল যত রাকাত নামাজ পড়তে চায় পড়তে পারবে, কোরআন স্পর্শ করতে পারবে। ওয়াক্তের মধ্যে প্রস্রাব নির্গত হলেও কোনো অসুবিধা নেই।

কিন্তু পরের নামাজের সময় হলেই অজুটি ভেঙে যাবে। তখন আবার নতুন করে অজু করে নামাজ পড়তে হবে। এভাবে মাজুর ব্যক্তি নামাজ আদায় করবে। এক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয় পবিত্র কাপড় দিয়ে নামাজ আদায় করবেন। যদি সম্ভব না হয় তাহলে ওই কাপড়সহই নামাজ আদায় করবেন। (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ১৪৮-১৫১)

তবে নরম কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করে নাপাকি ছড়িয়ে পড়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন।

হাদিসে আছে, একবার ফাতিমা বিনতে আবু হুবায়শ (রা.) রাসুল (স.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার রক্তস্রাব হতেই থাকে এবং আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না। আমি কি নামাজ ছেড়ে দেব? রাসুল (স.) জবাব দিলেন, না, এটা এক ধরনের শিরাজনিত রোগ, এটা ঋতুস্রাবের রক্ত নয়। তুমি তোমার ঋতুস্রাবের মেয়াদকাল নামাজ থেকে বিরত থাকো, আর যখন তা বন্ধ হয়ে যাবে, তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর নামাজ আদায় করবে। (বুখারি: ২২৮)

আর যদি এমন হয় যে, সন্দেহের কারণেই বারবার মনে হতে থাকে যে, প্রস্রাবের ফোঁটা বের হয়েছে। কিন্তু যাচাই করলে কিছু পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় কর্তব্য হলো- উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনের পর সেখানে কিছু পানি ছিটিয়ে দেওয়া। তারপর আর যাচাই করতে না যাওয়া এবং নামাজে দাঁড়িয়ে মূত্রফোঁটা এলো কি না সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নামাজ চালিয়ে যাওয়া। 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে এক লোক তার এ সমস্যার কথা জানালে তিনি তাকে এমনটি করতে বলেন এবং তাকে এ আদেশ দেন- ‘তুমি অজু করার পর তোমার লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে নেবে। অতঃপর যদি আর্দ্রতা অনুভব হয় তবে সেটাকে তোমার ছিটানো পানির আর্দ্রতা বলে মনে করবে।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৫৮৩)

সুতরাং এক্ষত্রে ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহকে স্থান দেওয়া উচিত হবে না। (কিতাবুল আসল: ১/৫৩; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১৮; আলমুহিতুল বুরহানি: ১/২১৮, ২৬৯; বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৪০; হিন্দিয়া : ১/৯)